তেল উৎপাদন করে না সিঙ্গাপুর। তবুও বিশ্বের অন্যতম তেল সরবরাহ কেন্দ্র দেশটি। তেল ব্যবসার পরিমাণের দিক থেকে সিঙ্গাপুর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের পরে রয়েছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশ সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে তেল সংগ্রহ করে।
২০২২ সালে সিঙ্গাপুরের জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনে তেলশিল্পের অবদান ছিল ৫ শতাংশ। তেল উৎপাদন না করেও কীভাবে তেল সরবরাহের কেন্দ্র হয়ে উঠল সিঙ্গাপুর, এই প্রশ্ন হয়তো অনেকের। এর উত্তর হলো তেল পরিশোধন ও পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন।
এমন কোনো বড় বৈশ্বিক তেল কোম্পানি নেই যারা সিঙ্গাপুরে কাজ করে না। এক্সনমবিল, শেল, বিপি, সিঙ্গাপুর পেট্রোলিয়াম কোম্পানি, সেম্বকর্প মেরিন, কেপেল করপোরেশন, পেট্রোচায়না, সিএনওসিসি, সৌদি আরামকো- সবাই সিঙ্গাপুরে রয়েছে।
সিঙ্গাপুরে এসব কোম্পানির দৈনিক তেল পরিশোধন সক্ষমতা ১৫ লাখ ব্যারেল। ফলে দেশটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল পরিশোধন কেন্দ্র। সেইসঙ্গে এক্সনমবিল ও বিপির মতো কোম্পানিগুলো সেখানে অপরিশোধিত তেল শোধনের পর নানা ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্যও উৎপাদন করে। যেমন গ্যাসোলিন, ডিজেল, জেট ফুয়েল ইত্যাদি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এসব পণ্য সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করে।
তেল পরিশোধনের ক্ষেত্রে সম্প্রতি সিঙ্গাপুর কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তার কারণ ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া বড় বড় তেল পরিশোধনাগার নির্মাণ করছে। কিন্তু এই শিল্পে সিঙ্গাপুরের ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা; সেই সঙ্গে দেশটির তেল পরিশোধন সক্ষমতা চাহিদার দ্বিগুণ। পরিশোধের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তারা আগামী কয়েক বছরের পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতা বার্ষিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায়। প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে সিঙ্গাপুরের পরিশোধনাগারগুলো পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের আরেকটি সুবিধা হলো জাহাজে তেল ভর্তির ক্ষেত্রেও তাদের বন্দর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্র। গত কয়েক বছরে তারা বার্ষিক ৪৫ মিলিয়ন বা সাড়ে ৪ কোটি টন তেল বিক্রি করেছে এই উদ্দেশ্যে, যা বিশ্বের সব জাহাজের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে পরিবেশজনিত উদ্বেগের কারণে সিঙ্গাপুর এখন সব জাহাজে তেল দেয় না, দেখেশুনে পরিবেশবান্ধব মানদণ্ড পূরণ করে তারা এই তেল বিক্রি করছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঠিক মাঝখানে সিঙ্গাপুরের অবস্থান হওয়ায় দেশটি আশপাশের দেশগুলোর অন্যতম প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ফলে তেল ব্যবসায় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্র সিঙ্গাপুর।
সূত্র : বিবিসি, স্ট্রেইটস টাইমস, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ