ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

আমিরাতের মরুভূমিতে উৎপাদিত হচ্ছে হীরা
অনলাইন ডেস্ক
ছবি সিএনএনের।

নিঃসন্দেহে পৃথিবীর দুর্লভ ধাতুগুলোর মধ্যে একটি হীরা। প্রকৃতিতে এটি খুঁজে পাওয়া তুলনামূলকভাবে বেশ কঠিন। মানুষ মহামূল্যবান এই ধাতুর সন্ধানে হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর গভীরে খনন করে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট গর্তের তৈরি হয়েছে। গভীরতার দিক থেকে যা ৬২৫ মিটার কিংবা ২,০৫০ ফুট। 

হীরা খুঁজতে গিয়ে খনন প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি ও মানুষ উভয়ের প্রতিই ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে। এই কাজটি একদিকে যেমন বিপজ্জনক; অন্যদিকে এটি বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে। কিন্তু হীরার চাহিদা মেটাতে খননই একমাত্র সমাধান নয়। বরং পাশাপাশি ভিন্ন উপায়ও রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল জেম সোসাইটি তথ্যমতে, ১৯৫০-এর দশকে প্রথম ল্যাবে হীরা উৎপাদন করা হয়েছিল।

সংস্থাটির দেওয়া তথ্যমতে, ১৯৫০-এর দশকে প্রথম তাদের ল্যাবে হীরা উৎপাদন করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাবে তৈরি হীরার প্রযুক্তিও বিকাশ লাভ করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ল্যাবে প্রায় ৮০ ভাগ সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত মানের হীরা তৈরি হচ্ছে। কৃত্রিম হীরা উৎপাদনে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং চীন।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, কৃত্রিমভাবে হীরা উৎপাদনের সুবিধা হচ্ছে এটি যেকোনো অঞ্চলেই করা যেতে পারে। এমনকি মরুভূমির মতো জায়গায়ও তা করা সম্ভব। সংযুক্ত আরব আমিরাত হীরা আমদানি ও রপ্তানিতে প্রথমসারির দেশগুলোর মধ্যে একটি। তবে আপাতত সেখানে হীরার কোনো প্রাকৃতিক খনি নেই। তাই দেশটির উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাবেগ শুধু হীরার ব্যবসাই নয়, বরং এটিকে উৎপাদন করার ব্যবসায় সম্ভাবনা দেখেন। 

তারই ধারাবাহিকতায় সাবেগ ২০২২ সালে দুবাই-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ২ডিওটি৪ ডায়মন্ডস প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই আরব আমিরাতের প্রথম কোম্পানি যেটি ল্যাবে উৎপাদিত হীরা তৈরি, কাটা এবং পালিশের কাজ করে থাকে।  এ সম্পর্কে সাবেগ বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল হীরাকে বরং ভোক্তাদের কাছে সহজলভ্য করা। এক্ষেত্রে সারা বিশ্ব থেকে হীরা নিয়ে আসার পরিবর্তে বরং স্থানীয়ভাবে তা উত্পাদন ও বিক্রি করা।’

সিএনএনকে সাবেগ জানান, আমাদের ধারণা ছিল হীরাকে বরং ভোক্তাদের কাছে সহজলভ্য করা। এক্ষেত্রে সারা বিশ্ব থেকে হীরা নিয়ে আসার পরিবর্তে বরং স্থানীয়ভাবে তা উত্পাদন ও বিক্রি করা। তবে প্রাকৃতিক ডায়মণ্ডের সঙ্গে মূল পার্থক্য হচ্ছে আমরা চাপ, তাপ ও গ্যাস নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। কিন্তু খনির হীরায় তার প্রয়োজন হয় না, প্রাকৃতিকভাবেই হয়। তার কথায়, 'বিভিন্ন প্যারামিটারের ওপর ভিত্তি করে ডায়মন্ডের উৎপাদনের সময় ঠিক করা হয়। এক্ষেত্রে উৎপাদনে গতি যত কম হবে মান তত বৃদ্ধি পাবে।'

দুবাই মাল্টি কমোডিটি সেন্টারের সিইও ও নির্বাহী চেয়ারম্যান আহমেদ বিন সুলায়েম বলেন, আরব আমিরাত একটি শীর্ষ হীরা ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এক্ষেত্রে তেলের ব্যবসার পাশাপাশি বৈচিত্র্য আনতে ল্যাবে-উত্পাদিত হীরা শিল্প প্রসারিত করা অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

তিনি বলেন, ল্যাবে উৎপাদিত ডায়মন্ড প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের সঙ্গে সংযোগের প্রতীক। এর বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই রূপান্তরের যুগে দুবাইকে একটি অগ্রগামী শক্তি হিসেবে দেখতে আমরা উচ্ছ্বসিত। তবে ল্যাবে উৎপাদিত ডায়মন্ড শিল্পে নিজেদের অবস্থান আরও বড় পরিসরে তৈরি করা আরব আমিরাতের জন্য খুব একটা সহজ হবে না। কেননা দেশটিকে এক্ষেত্রে ভারত ও চীনের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে।

যদিও আগে থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যান্য কোম্পানি ২ডিওটি৪ এর দেখানো পথই অনুসরণ করছে। যার মধ্যে এইচআরএ গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ইভিকিউএ ডায়মন্ডস অন্যতম; যা এইচআরএ গ্রুপের একটি অংশ। কোম্পানিটি মাত্র কয়েক মাস আগে আমিরাতে নিজেদের ল্যাব স্থাপন করেছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় ব্র্যান্ড ইটিকা ও ইয়াইনি শুধু ল্যাবে তৈরি ডায়মন্ড ব্যবহার করে তাদের ডিজাইন বাজারজাত করছে। সূত্র : সিএনএন।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক



এই পাতার আরো খবর