ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ অন্ধকার!
অনলাইন ডেস্ক
প্রতীকী ছবি

বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগ ও কর্মসূচি দেখা গেলেও ব্যাটারিচালিত এই ধরনের যানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও দেশে ইভি আসতে শুরু করেছে, তবে এই যান ব্যবহারে সুবিধার চেয়ে অসুবিধার তালিকাই বড়। চলুন জেনে নেওয়া যাক- ইভির উল্লেখযোগ্য অসুবিধাগুলো।

অপর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন

এখনও দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য তেমন চার্জিং স্টেশন চালু হয়নি। সুতরাং এই গাড়ি শুধু বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই চার্জ করতে হবে। আর ভ্রমণে বের হওয়ার আগে রাস্তা মাপতে হবে বারবার।

দূরপাল্লার অনুপযোগী যান

যেহেতু দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য চার্জিং স্টেশন নেই। সতুরাং এই যান নিয়ে দূরপাল্লার ভ্রমণ অসম্ভব। কেননা, ইভিতে ব্যবহার করা হয় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি। আর এই ব্যাটারি প্রযুক্তির রয়েছে শক্তির ঘনত্বের অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতা। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে সীমিত পরিসরে ভ্রমণ করা যাবে। বলা যায়, শুধু সিটিতে, অর্থাৎ যে শহরে বাস করছেন সেখানেই ব্যবহার করতে হবে। কেননা, দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।

ব্যাটারি জটিলতা

ইভি ব্যবহারে প্রয়োজন হয় ভারী ও বড় আকারের ব্যাটারির। ভারী ব্যাটারি যেমন গাড়ির ওজন বাড়ায়, তেমনই এই ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে নতুন সংযোজন করতে খরচও অনেক বেশি, যা আর্থিক সীমাবদ্ধতার ওপর বাড়তি চাপের কারণ হবে।

ব্যাটারি সংক্রান্ত নিরাপত্তার ঝুঁকি

সময়ের সাথে সাথে ইভি ব্যাটারি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ফলে ভ্রমণ পরিধি আরও কমে যায়। ব্যাটারি ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকলে অভ্যন্তরীণ শর্টসার্কিট ও ব্যাটারি গরম হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এতে করে বাংলাদেশের মতো গরম আবহাওয়ায় সম্ভাব্য অগ্নি/বিস্ফোরণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। আবার নতুন ব্যাটারি সংযোজন করতে হলে খরচ হবে অনেক বেশি। বলা যায়, পুরনো বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের জন্য যে খরচ হবে, সে টাকায় প্রায় একটি নতুন গাড়িই কেনা যাবে।

ধীরগতির চার্জিং

বৈদ্যুতিক গাড়ি পুরোপুরি চার্জ করতে সময় লাগে অনেক বেশি। কেননা, চার্জ হয় খুব ধীরে। যেহেতু দেশে চার্জিং স্টেশন নেই, ব্যাটারি চার্জ দিতে সময় আরও বেশি লাগবে। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যুৎ সমস্যা হলে গাড়ির চার্জ ঠিকমতো করা যায় না।

এমনকি চার্জিং স্টেশনে গিয়ে দ্রুত রিচার্জ করা হলেও প্রচলিত জ্বালানি চালিত যানবাহনগুলোকে রিফুয়েল করার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সময় নেয়, যা সামান্য দূরের ভ্রমণকেও কঠিন করে তোলে।

অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য চার্জিং অবকাঠামো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা, ব্যাপক পরিসরে নির্ভরযোগ্য চার্জিং অবকাঠামো তৈরি করতে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর বড় বিনিয়োগ ও সমন্বয় প্রয়োজন। বাংলাদেশে এ ধরনের সমন্বয় ও বিনিয়োগ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

এগুলো ছাড়াও বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসারে পরিবেশ ও স্থায়িত্ব সংক্রান্ত উদ্বেগও রয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে-

ব্যাটারির কাঁচামালা ও প্রক্রিয়াকরণ জটিলতা

লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদনে বিরল আর্থ ধাতু খনি এবং প্রক্রিয়াকরণ প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে নেই। বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য আমাদের চীনের মতো সমস্ত ব্যাটারি বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে, যা খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে।

এনার্জি-ইনটেনসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং

এমনকি খরচ বাঁচাতে দেশে ব্যাটারি তৈরির জন্য আমরা যদি লিথিয়াম আমদানিও করি, শুধু ব্যাটারি উৎপাদনের জন্যই অনেক বেশি পুঁজির প্রয়োজন হবে।

পুনর্ব্যবহার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জটিলতা

জটিল রসায়নের কারণে ব্যবহৃত ইভি ব্যাটারির সঠিক পুনর্ব্যবহার এবং এ সংক্রান্ত বিপজ্জনক পদার্থের ফুটো হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জিং হবে। কেননা, বাংলাদেশে আগুন এবং সমতল ভূমি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে রাসায়নিক বিষক্রিয়া প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো নেই।

বিদ্যুৎ

দাবি করা হয় ইভি পরিবেশবান্ধব, তবে এই সুবিধা নিতে হলেও ব্যাটারি চার্জ করতে বিদ্যুতের উৎসের ওপরই নির্ভর করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকেই। সুতরাং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়লে চার্জিং চাহিদাও বাড়বে, আর সেক্ষেত্রে বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদাও। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। ফলে কার্বন নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা সীমিত হতে পারে। এতে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

জলবায়ু ও আবহাওয়া পরিস্থিতি

বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু ব্যাটারির ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং ব্যাটারি উত্তপ্ত হওয়ায় ব্যাটারিতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঝুঁকি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

ক্রয়ক্ষমতা ও দুষ্প্রাপ্যতা

ইভি ও এর ব্যাটারির উচ্চমূল্য বাংলাদেশে এর গ্রহণযোগ্যতা সীমিত করবে। কেননা, দেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের আর্থিক সংস্থান সীমিত। এর ফলে অনেকেই সস্তা ও নিম্নমানের ব্যাটারি ব্যবহার বা অনুপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের দিকে ঝুঁকতে পারে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে।

ভর্তুকি ও প্রণোদনা

দাম বেশি হওয়ায় ইভির ক্রয়ক্ষমতা সরকারি ভর্তুকি ও প্রণোদনার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু চলমান ডলার সংকটের কারণে সরকারের জন্য তা প্রদান করা সম্ভব নাও হতে পারে।

নগরায়ন ও জনসংখ্যার ঘনত্ব

ঢাকার মতো শহরে দ্রুত নগরায়ন এবং উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের শহরে ইভির ব্যাটারিতে আগুন বা বিস্ফোরণ ঘটলে তা বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এ ধরনের ঘটনা অনেকের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এবং উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

জরুরি সাড়াদান সক্ষমতার অভাব

বাংলাদেশের জরুরি সাড়াদান সক্ষমতার অভাব রয়েছে। সুতরাং দুর্ঘটনাজনিত কারণে ইভি ব্যাটারি থেকে সৃষ্ট আগুন বা বিস্ফোরণ সামলাতে পর্যাপ্ত সাড়া নাও মিলতে পারে। তাছাড়া এই জরুরি সাড়া কার্যক্রম কার্যকরের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে।

বিডি প্রতিদিন/আজাদ



এই পাতার আরো খবর