ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

যে মন্ত্রে বদলে যাচ্ছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সৌদি
অনলাইন ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে রক্তাক্ত সৌদি আরব। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ফিরে এসেছে সেই পুরোনো চিত্র। চারিদিকে কেবল সংঘাত, যুদ্ধ, রক্তপাত  আর সহিংসতার ছড়াছড়ি। 

তবে বিপরীতে হাঁটছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সৌদি আরব।

তার নেতৃত্বে দ্রুতই খোলস বদলাচ্ছে সৌদি। ঝেড়ে ফেলছে রক্ষণশীল তকমাও। বিনিয়োগবিষয়ক ম্যাগাজিন ব্যারনসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুব দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব। একই সঙ্গে যুবরাজের দেশের রয়েছে অর্থনৈতিক উচ্চাশাও। আর সেই পরিকল্পনা ধরেই এগোচ্ছে দেশটি।

কাগজে কলমে সৌদির শাসনকর্তা একজন বাদশাহ। তবে বাস্তবতা বলছে মূল ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তার হাত ধরেই সৌদিতে নারীদের কর্মসংস্থান দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটির বিনোদন আর অবকাশ খাতেও লেগেছে নতুনের ছোঁয়া।

সৌদি আরবের শেয়ারবাজারও ২০২২ সালের পর থেকে চাঙা হয়ে উঠেছে। এই বাজারে ৭০টি কোম্পানি গণপ্রস্তাব নিয়ে এসেছে। দুবাইভিত্তিক ইস্ট ক্যাপিটালের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক এমের অ্যাকাকম্যাক মনে করেন, গত ১০ বছরে সৌদি শেয়ারবাজার ৫০ বছরের অগ্রগতি অর্জন করেছে।

মোহাম্মদ বিন সালমান সবার কাছে এমবিএস হিসেবে পরিচিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, মাত্র ৩৮ বছর বয়সী এই যুবরাজ ভূরাজনীতির খেলায় বেশ পরিপক্বতা অর্জন করেছেন। সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে তার ইমেজে যে টান পড়েছিলো, তাও তিনি কাটিয়ে উঠেছেন অনন্য দক্ষতায়। 

রিয়াদ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও বেশি প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় যুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে চীনের সঙ্গেও সখ্য গড়েছেন যুবরাজ। ইরান থেকে ইয়েমেন; সবাইকে বন্ধুত্বের কাতারে আনতে তিনি মাথার খেলাটাও খেলছেন দারুণ। বর্তমানে সৌদি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। 

বিনিয়োগ ব্যাংক জে পি মরগানের ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের উদীয়মান বাজারবিষয়ক কৌশলবিদ ডেভিড অ্যাসেরকফ মনে করেন, সতর্ক বিনিয়োগকারীরা সৌদি আরবের এই ইতিবাচক পরিস্থিতি থেকে লাভবান হতে পারেন। তিনি বলেন, দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, বিনিয়োগকারীরা সাধারণত এমন কোম্পানি খোঁজেন। সৌদি আরবে সেগুলো পাওয়া যায়।

সৌদি আরবের নিওম প্রকল্প নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। এই প্রকল্পের খরচ ৫০ হাজার কোটি ডলার থেকে বেড়ে দেড় লাখ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। 

তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে সৌদি সমাজে। এই সমাজে মানুষের গড় বয়স ৩১। অর্থাৎ সৌদি সমাজ এখন বেশ তারুণ্যে ঠাসা। এই তরুণ সৌদি সমাজ এমবিএসের আনা সব পরিবর্তন বেশ উপভোগ করছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে, সৌদি আরবের তেলবহির্ভূত অর্থনীতি চলতি দশকে ৪ শতাংশ হারে বাড়বে। শরীরচর্চা-বিষয়ক কোম্পানি লিজাম স্পোর্টসের শেয়ারের দাম গত ১৮ মাসে ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। সরকারের ডিজিটাল কর্মকাণ্ড-বিষয়ক ঠিকাদারি পাওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক কোম্পানি এলম কোর শেয়ারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।

ইস্ট ক্যাপিটালের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক এমের অ্যাকাকম্যাক জানান, পর্যটনভিত্তিক যেসব কোম্পানি রয়েছে, যেমন বাজেট সৌদি অ্যারাবিয়া কিংবা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেমন আতা এডুকেশনাল—এগুলো হয়ে উঠেছে নতুন সৌদি অর্থনীতির বড় খেলোয়াড়।

সৌদি আরবে দ্রুতই বন্ড বাজারও গড়ে উঠছে। দেশটির ৩০ বছর মেয়াদি সৌদি পেপার বন্ডে একই ধরনের মার্কিন বন্ডের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি সুদ পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির সরকারের ঋণ এখনো জিডিপির ৩০ শতাংশের কম। আর রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪ হাজার কোটি ডলার।

এক দশক আগের কেউ যদি সময় পরিভ্রমণ করে সৌদি আরবের বর্তমান অবস্থা দেখেন তাহলে তিনি দেশটির পরিবর্তন দেখে রীতিমতো চমকে যাবেন।

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর