ঢাকা, বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ এবং লাইটিং পণ্যে দেশীয় কোম্পানির আধিপত্য
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

‘মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ’- (এমডব্লিউবি) পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক পণ্যের বাজারে ৮০ শতাংশেরও বেশি দেশীয় ব্র্যান্ড আধিপত্য বিস্তার করলেও বাংলাদেশের  ৪৭ শতাংশ মানুষ  নন-ব্র্যান্ডেড বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও লাইট ব্যবহার করছে। যেখানে নিম্ন মানের চায়না প্রোডাক্টসহ বিভিন্ন নকল প্রোডাক্ট রয়েছে। যার অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে।

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে সংবাদ সম্মেলন করে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ও এমডব্লিউবির সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান ও আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হোসাইন।

গবেষণার আওতায় আনা পণ্যগুলো ছিল- সুইচ, সকেট, হোল্ডার, মাল্টি-প্লাগ, সার্কিট ব্রেকার, মিটার এবং বিভিন্ন হালকা পণ্য যেমন এলইডি লাক্স, এলইডি টিউব, এলইডি প্যানেল, ব্র্যাকেট এলইডি, জিএলএস, এনার্জি এফিশিয়েন্সি বাল্ব, ইমার্জেন্সি লাইটিং অপশনস।

গবেষণায় দেখা যায়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও লাইটিং পণ্যের বাজারে ৮০ শতাংশেরও বেশি দেশীয় ব্র্যান্ড আধিপত্য বিস্তার করছে। দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সুপার স্টার বাজারে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। ইলেক্ট্রিক্যাল সরঞ্জামের মার্কেট শেয়ারে সুপার স্টার ২৯ শতাংশ, ওয়ালটন ১৭ শতাংশ, ক্লিক ১৭ শতাংশ, এনার্জি প্যাক ৯ শতাংশ, ওসাকা ৪ শতাংশ এবং ব্লিঙ্ক, এমইপি ও লাক্সারি প্রত্যেকে ৩ শতাংশ করে বাজার দখল করে আছে।

অন্যদিকে ব্রান্ডেড লাইটিং পণ্যের মার্কেট শেয়ারে সুপার স্টার ২৫.৫৯ শতাংশ, ক্লিক ১৩ শতাংশ, ওয়ালটন ১২ শতাংশ, ট্রান্সটেক ১০ শতাংশ, এনার্জি প্যাক ৮ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। অপরদিকে বিদেশি কোম্পানির মধ্যে  ফিলিপস ৭ শতাংশ ও অন্যান্য কোম্পানি ৩.৬১ শতাংশ বাজার দখল করে আছে।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে দেশজুড়ে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার খুচরা বিক্রেতা এবং ২ হাজার ৫ শ উদ্যোক্তাসহ মোট ৫ লাখেরও বেশি মানুষ এই শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। ইলেক্ট্রিক্যাল সরঞ্জাম ও লাইটিং এই দুই ক্যাটাগরির পণ্যের সম্মিলিত বাজার আকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল সরঞ্জাম পণ্যের বাজার ৩ হাজার ৩শ কোটি এবং লাইটিং পণ্যের বাজার ২, হাজার ৭শ কোটি টাকা।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পণ্যের বাজার গত দুই দশক ধরে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। ইলেক্ট্রিক্যাল সরঞ্জাম ও লাইটিং পণ্যের গড় প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে প্রায় ১০% এবং প্রায় ১৩%। যদি আগামী দিনগুলোতে এই প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই খাতটি একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বড় খাত হিসাবে আবির্ভূত হবে। নন-ব্র্যান্ডেড পণ্য ব্যবহারকারী লোকদের দেশীয় ব্র্যান্ডের দিকে আকৃষ্ট করতে পারলে  নিরাপদ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈদ্যুতিক পণ্য শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে এই গবেষণা করা হয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর সারাদেশে জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে শহর ও গ্রামের ২০১৬ জন ব্যবহারকারী, ১০৩ জন খুচরা বিক্রেতা, ৯৯ জন ইলেক্ট্রিশিয়ানকে নমুনা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ জন বৈদ্যুতিক পণ্য  বিশেষজ্ঞের গভীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, দুর্দান্ত সম্ভাবনাময় এই শিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য গ্রে-মার্কেটের কার্যক্রম হ্রাসে সরকারের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের বিদ্যমান ট্যাক্স পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করতে হবে যাতে কোম্পানিগুলো কম ব্যয়ে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি এ সমস্ত শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ গড়ে তোলার জন্য সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে নিরাপদ ও মানসম্মত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। 

অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, গবেষণা অনুসারে আমাদের দেশের ৫৩ শতাংশ মানুষ ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করে  ৪৭ শতাংশ মানুষ নন ব্র্যান্ডেড সস্তা পণ্য অর্থাৎ গ্রে মার্কেটের পণ্য ব্যবহার করছে। যেখানে নিম্নমানের চায়না প্রোডাক্টসহ বিভিন্ন নকল প্রোডাক্ট রয়েছে। যার অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আমাদের গবেষণার লক্ষ্য হলো নিরাপদ বৈদ্যুতিক পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের পলিসি নির্ধারণে সহযোগিতা করা। এই যে ৪৭ শতাংশ মানুষ নন ব্র্যান্ডেড পণ্য ব্যবহার করছে, এদেরকে যদি আমরা দেশীয় ব্র্যান্ডের দিকে আকৃষ্ট করতে পারি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈদ্যুতিক পণ্য শিল্পের বিকাশ ঘটবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন উপস্থিত মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহীদুল ইসলাম ও আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. রাজিয়া বেগম।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল



এই পাতার আরো খবর