জয়া বচ্চন। বলিউডের অন্যতম খ্যাতিমান একজন অভিনেত্রী। নায়িকা হিসেবে তাঁর অভিনয়ে পদার্পণ ১৯৭১ সালে। তারপর দর্শক মন জয় করে ৫০তম বছরে নিজের সেরা অভিনয়ে উপহার দিয়েছেন অজস্র নামিদামি ছবি। তিনি বলিউডের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। অভিনয়ের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে তাঁকে নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
অভিনয়ের শক্তি ‘হামকো মনকি শক্তি দেনা’ [আমার মনে শক্তি দাও], বিধাতার কাছে গানে গানে এমন চাওয়া জয়া ভাদুড়ির। সেই চাওয়া অবশ্য বৃথা যায়নি। বিধাতা জয়া ভাদুড়ির মনোষ্কামনা পূর্ণ করতে বিলম্ব করেননি। দ্রুত তিনি হয়ে উঠলেন বিখ্যাত এক অভিনেত্রী।
১৯৭১ সালে নায়িকা হয়ে এলেন বড় পর্দায়। ছবির নাম ‘গুড্ডি’। এ ছবির নির্মাতা ছিলেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্দেশক হৃষিকেশ মুখার্জি। নামভূমিকায় অভিনয় করে দর্শক হৃদয় জয় করলেন জয়া। ওই ছবিতে এক কিশোরীর প্রেম পরিণতিতে জড়ানোর ভূমিকায় অভিনয় করতে হয় তাঁকে। এতে তাঁকে প্রখ্যাত অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর প্রতি মোহাগ্রস্ত স্কুল বালিকার চরিত্রে দেখা যায়। ২৩ বছর বয়সী চপলা চঞ্চল মেয়েটিকে এক দেখাতেই মনের চোখে নজরবন্দী করে ফেলে দর্শক। জয়ার প্রতি সেই ভালোলাগা এখনো দর্শকের চোখে-মুখে লেপ্টে আছে অনন্তকালের হয়ে। চলতি বছর জয়া নায়িকা হয়ে অভিনয়ে অভিষেকের ৫০ বছরের চৌকাঠে পা রাখলেন। অবশ্য জয়া ভাদুড়ির চলচ্চিত্র জীবনের শুরুটা ছিল কিশোরীকালে ১৯৬৩ সালে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’ ছবিতে অভিনয়ের আরম্ভ ছিল তাঁর। এতে নায়িকা নয়, ছোট্ট একটি চরিত্রে কাজ করেন তিনি। এরপর তিনি আরও দুটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হলো ১৩ মিনিট দৈর্ঘ্যরে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সুমন এবং ১৯৭১ সালে ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের ভাতৃবধূ চরিত্রে। এরপর জয়ার অভিনয় জীবনের ৫০ বছরের দীর্ঘ জার্নিতে যোগ হয় বহু সফল ছবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- উপহার (১৯৭১), কোশিশ (১৯৭২) ও কোরা কাগজ (১৯৭৪) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর স্বামী অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে জঞ্জির (১৯৭৩), অভিমান (১৯৭৩), চুপকে চুপকে (১৯৭৫), মিলি (১৯৭৫), শোলে (১৯৭৫), সিলসিলা (১৯৮১) প্রভৃতি। ১৯৮১ সালে সিলসিলা চলচ্চিত্রে কাজ করার পর তিনি অভিনয় থেকে দীর্ঘ বিরতি নেন। এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি গোবিন্দ নিহলানির হাজার চৌরাশি কি মা চলচ্চিত্র দিয়ে আবার অভিনয়ে ফেরেন। তখন থেকে তিনি কয়েকটি সমাদৃত ও ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, তন্মধ্যে রয়েছে ফিজা (২০০০), কভি খুশি কভি গম (২০০১) ও কাল হো না হো (২০০৩), লাগা চুনারি মেঁ দাগ (২০০৭) ও দ্রোনা (২০০৮), কি অ্যান্ড কা (২০১৬) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কামব্যাক করা এসব চলচ্চিত্র আবার তাঁকে সম্মানের আসনে বসিয়ে দেয় এবং পুরস্কৃতও হন তিনি।
পৃথিবীর আলোতে... ভারতের খ্যাতিমান সাংবাদিক তরুণ ভাদুড়ি আর ইন্দিরা ভাদুড়ির ঘর আলো করে জয়া ভাদুড়ি জন্ম নেন ১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের জবলপুরে। জয়া ভোপালের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৬ সালে সারা ভারতের সেরা এনসিসি ক্যাডেট সম্মানে সম্মানিত হন।
কর্মের গণ্ডি ও সম্মাননা জয়া শুধু একজন দক্ষ অভিনেত্রীই নন, তিনি বলিষ্ঠ রাজনীতিবিদও। সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য হন তিনি। ২০০৪ সাল থেকে চার মেয়াদে এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। তাকে তাঁর সময়ের হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়। কর্মজীবনে নয়টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়াড অর্জন করেন, তন্মধ্যে তিনটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে, তিনটি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে; তিনি ২০০৭ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করে। শুধু অভিনেত্রী নন, ছবির গল্পও লিখেছেন তিনি। তাঁর রচিত একটি চলচ্চিত্র হলো স্বামী অমিতাভ প্রযোজিত ও অভিনীত ‘শাহেনশাহ’। চলচ্চিত্রটি আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
বাংলাদেশের ছবিতে ২০১১ সালে তিনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র মেহেরজান-এ নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন।
এটি ১৯৭১ বাংলাদেশে গণহত্যার সময়ে বাংলাদেশি তরুণী মেহের ও এক পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার ভালোবাসার গল্প, যেখানে সেই কর্মকর্তাটি যুদ্ধে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং পাকিস্তানি সেনা দলের কাছ থেকে মেহেরকে রক্ষা করে।
স্বামী, সন্তান জয়া ভাদুড়ি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনকে ১৯৭৩ সালে বিয়ে করে জয়া বচ্চন হয়ে যান। তাঁর দুই সন্তান অভিষেক বচ্চন ও শ্বেতা নন্দা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল