ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সিএএ, ক্ষুব্ধ ভারতের শিল্পাঙ্গনের বিশিষ্টজনরা
অনলাইন ডেস্ক

সোমবার বিকালে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করেছে। লোকসভা ভোটের আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ক্ষোভে ফুঁসছে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনও।

নাট্য নির্দেশক ও পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়ের বললেন, ‘একটি চরিত্র প্রশ্ন তোলে যে, হঠাৎ পাসপোর্টের খোঁজ কেন করা হচ্ছে। অন্য এক জন বলে যে, জবাই করার সময়ে মানুষকে যাতে জলদি খুঁজে পাওয়া যায়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা।’

সুমন মনে করেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পৃথিবী এগিয়ে চললেও ফ্যাসিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে খুব বেশি বদল ঘটেনি। তাই ক্ষমতাবানরা নিজের প্রয়োজনে দুর্বলকে ব্যবহার করতেই চাইবে বলে মনে করছেন সুমন। তার কথায়, ‘নির্বাচনের আগে এখন রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন তুরুপের তাস খেলতে চায়। সকলেই আটঘাট বেঁধে ময়দানে নামে। কিন্তু সেই তাস সিএএ-এ হলে, সেটা মারণাস্ত্র!’’

পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সেই প্রক্রিয়া যদি ধর্মের ভিত্তিতে করা হয়, সেখানে আপত্তি উঠতে বাধ্য। এটা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক একটা পদক্ষেপ।’ সিএএ-র মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনের আগে মেরুকরণকে স্পষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন কমলেশ্বর। তার যুক্তি, ‘সিএএ ঘোষণা করে দেশের সীমান্তবর্তী ভোটকেন্দ্রের বাসিন্দাদের কাছে কী বার্তা পাঠাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার, সেটাও স্পষ্ট হয়ে গেল।’

সিএএ-কে নির্বাচনি কৌশল হিসেবেই দেখছেন কমলেশ্বর। তার কথায়, ‘অতীতেও আমরা এ রকম কৌশল দেখেছি। তার ফলে মেরুকরণ হয়তো বাস্তবায়িত হয়েছে, ভোটে লাভ হয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে দেশের মানুষের কোনও উন্নতি হয়নি।’ কমলেশ্বর মনে করেন, নির্বাচনের আগে নিজেদের দুর্বলতা থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ফেরাতেই সরকার সিএএ নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। তিনি বললেন,‘অর্থনৈতিক বিপর্যয়, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব দেশে একটা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। পাশাপাশি, নির্বাচনি বন্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। সব মিলিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল চাপে পড়েছে বলেই এখন সিএএ-কে হাতিয়ার করা হয়েছে।’ 

সিএএ প্রণয়ন করার নেপথ্যে একাধিক কারণকে ‘অনুঘটক’ হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন নাট্য নির্দেশক ও অভিনেতা কৌশিক সেন। তিনি বললেন, ‘‘নির্বাচনি বন্ড নিয়ে স্টেট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে এসেছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনার অরুণ গয়াল পদত্যাগ করেছেন। ফলে শাসকদলের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’ তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতেই এখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন কৌশিক। কিন্তু সেখানেও সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করলেন তিনি। তার কথায়, ‘পড়ে দেখলে বোঝা যাবে, অনেক কমিটি এবং নথিপত্র খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে মানুষকে কেন যেতে হবে? তারা তো এই দেশেই থাকছেন! আবার বিগত কয়েক বছরে সিএএ-র বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। বিচারাধীন পরিস্থিতিতে কী ভাবে এই আইন ঘোষণা করা হল, জানি না।’

সিএএ নিয়ে অতীতে প্রতিবাদের সাক্ষী থেকেছে গোটা ভারত। এ রাজ্যেও সেই প্রতিবাদের আঁচ লেগেছিল। কিন্তু নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশ কেন চুপ, তা ভেবে হতাশ কৌশিক। তার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘প্রত্যেক বার শুধু আমরা গুটি কয়েক মানুষ কেন প্রতিবাদ করব? বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ তো বামফ্রন্টের সময়েও চুপ করে ছিলেন, এখনও তাই।’ কৌশিকের মতে, বুদ্ধিজীবীদের নির্দেশিত পথে জনগণ হাঁটবে, সেই দিন এখন বদলেছে। বরং অস্তিত্বের সঙ্কটে চিন্তিত মানুষ ঘুরে দাঁড়ালে সেই প্রতিবাদকে অনুসরণ করবে তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবী’ সম্প্রদায়। তিনি বললেন,‘আমরা চুপ করে থাকলে প্রশ্ন ওঠে, কেন চুপ করে রয়েছি। আর যাঁরা দীর্ঘ দিন চুপ করে রয়েছেন, তাঁদের নিয়ে কিন্তু মানুষ প্রশ্ন করেন না!’

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর