৬ বছর আগে হুমায়ূন আহমেদ একটা সিদ্ধান্ত নিলেন...আমার কনিষ্ঠ পুত্র নিনিতের বয়স তখন ছয় মাসের কিছু কম... সন্ধ্যার পর হুমায়ূন যখন তার জন্য বানানো বারান্দায় বসে জোছনা দেখতেন.., তখন গান শোনানোর জন্য বারান্দায় আমার ডাক পড়ত...
চার বছরের পুত্র নিষাদ আর তার শিশু ভ্রাতাকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি তাড়াহুড়া করে দুই একটা গান গেয়েই উঠে আসতাম... এরকম এক সন্ধ্যায় মন খারাপ করে হুমায়ূন সিদ্ধান্ত নিলেন- ‘নাহ্... গান শোনানোর জন্য নিষাদ নিনিত এর মাতাকে তিনি আপাতত বিরক্ত (!!!) করবেন না...
তার কুসুমের কণ্ঠের যে গানগুলো তার বারবার শুনতে ইচ্ছা করে সেগুলোকে রেকর্ড বন্দী করে ফেলবেন... এরপর আর চিন্তা কি..! সিডি প্লেয়ার অন তো গান শুরু... নিনিত নিষাদ এর মাতা কে পাত্তা দেয়ারই আর প্রয়োজন নাই...’
ভাবা মাত্রই ফোন গেল ইমন সাহা’র কাছে... তার সংগীতায়োজনে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় গানগুলো রেকর্ড করতে স্টুডিওতে নিয়ে গেলেন ‘কুসুম’কে... স্টুডিওর বাইরে নিষাদ হুমায়ূন দৌড়ে বেড়ায়, আর নিনিত হুমায়ূন কোলে চড়ে বেড়ায়...
গান যখন বেশ কয়েকটাই হয়ে গেল, হুমায়ূন এর মাথায় তখন ভূত চাপল সে গানগুলো সব শ্রোতাদের শোনানোর জন্য... ঠিক করে ফেললেন সবার জন্য প্রকাশ করবেন সিডি আকারে... কিন্তু হলো না...
সাতটি গান রেকর্ডের পরপর সেপ্টেম্বর ২০১১ তে কর্কট রোগের সাথে যুদ্ধ করতে আমরা চলে গেলাম ১৮ হাজার মাইল দূরে... গানগুলো পড়ে রইল বাকসোবন্দী হয়ে...
মাঝে মাঝে নিউইয়র্কের ১৪৪-০১, ৯০ এভিনিউ, জ্যামাইকার বাড়ির দো’তলা থেকে সিডি প্লেয়ারে বেজে ওঠে- “চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে, নিয়ো না নিয়ো না সরায়ে...”
আজ আমার জন্মদিনে ‘কুসুম’এর গাওয়া হুমায়ূনের প্রিয় দু’টা গান সবাইকে উপহার দিলাম... “শেষ জয়ে যেন হয় সে বিজয়ী তোমারই কাছেতে হারিয়া...”
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/১৪ অক্টোবর, ২০১৭/ফারজানা