নিউইয়র্কে এখন যদিও বৈশাখ, কিন্তু বৈশাখের দাবদহ নেই। ঝকঝকে রোদ আর মৃদ শীতল বাতাসের চমৎকার দিন। ধূসর ঘাসগুলো সবুজ হতে শুরু করেছে সবে। নিরুদ্দেশ যাত্রা থেকে দলবেঁধে পাখিরা ফিরে আসতে শুরু করেছে। বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এই সময়টার প্রতি তীব্র ভালোলাগা কাজ করে।
প্রতি শীতের শেষে আমি অধীর হয়ে থাকি পুনর্বার এই সময়টির সাথে দেখা হবার। তখন গোলাপি চেরি ফুলে ছেয়ে থাকে গোটা শহর। এবার শীতটা এখনো জেঁকে আছে। ফুলেরাও একটু দেরিতে ফোটার কথা। তবুও চেরি ব্লুসম বলে কথা! দুপুরের কিছু আগে বাস, ট্রেন ধরে পৌঁছাই রুজভেল্ট আইল্যান্ড। দলে দলে মানুষ সেদিকেই যাচ্ছে। জনসমুদ্রের ভিড়ে মিশে যাই। কেননা, আমাদের সবার উদ্দেশ্য চেরি ব্লুসম দেখা।
ধারণা করেছিলাম, সেখানে শুধুই চেরি ফুল দেখবো যতদূর চোখ যায়। গিয়ে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখি দু'একটি শাদা রঙের ফুলের গাছ কী ভীষণ একলা দাঁড়িয়ে! সেখানেই সকলে ছবি তোলায় ব্যস্ত। বাসে পুরো এলাকা এক পাক ঘুরে দেখে এলাম। কোথাও গোলাপি চেরি চোখে পড়েনি। নদী তীরে লক্ষ্যহীন ঘুরে বেড়ালাম। একঝাঁক হাঁস নদীর জলে ভেসে বেড়াচ্ছিল নিঃশব্দে।
মাথার উপরে নীল আকাশে একদলা মেঘ ভেসে গেলো। স্বচ্ছ জলের দিকে তাকাতেই একদল পাখির উড়ে যাওয়া দেখি। জলের নিচে একই সাথে আকাশ, উড়ে যাওয়া পাখি, আর জলে ভেসে বেড়ানো হাঁস, কী অদ্ভুত না! মনে পড়ে গেলো, সেই গানটি...
একখানা মেঘ ভেসে এলো আকাশে একঝাঁক বুনোহাঁস পথ হারালো... একা একা বসে আছি...
বাড়ির উদ্দেশ্যে ট্রেন স্টেশনের দিকে ফিরছি। কিন্তু হায়, ফিরে গিয়ে কী বলবো! সকালেই যে স্বামী ঠাট্টার ছলে বলেছিলেন, গাছে তো ফুল ফোটেনি এখনো, গিয়ে বড়জোর বিশুদ্ধ বাতাসে ঘুরে আসতে পারো! আমিও বেশ দাপটের সাথে বলেছিলাম, বেশ তো, দেখে নিও ফুলের সাথে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিবো।' আচমকা পকেটে ফোন বেজে উঠলো! অন্যপ্রান্তে বন্ধুর উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ, গোলাপি ফুলের গাছ পাওয়া গিয়েছে, বাঁয়ে ব্রিজের ঠিক নিচেই। ছুটলাম সেদিকে। মানুষজন ছবি তোলায় ব্যস্ত। সেইসাথে আমিও। যাক্ এবার অন্তত মানটুকু বেঁচে গেলো। টেক্সট করে ছবি পাঠাচ্ছি আর ফুরফুরে মনে গাইছি...
বাতাসে বহিছে প্রেম নয়নে লাগিলো নেশা কারা যে ডাকিলো পিছে বসন্ত এসে গেছে...
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/২৬ এপ্রিল, ২০১৮/ফারজানা