ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নাট্যকারের স্বাধীনতা বনাম দর্শক চাহিদা
রওনক হাসান
রওনক হাসান

কোথাও কেউ নেই নাটকের বাকের ভাই এর ফাঁসি নিয়ে সারাদেশে তখন তুমুল আন্দোলন। একটি কম্পনার নাটকের চরিত্রকে কেন্দ্র করে মানুষের এমন আচরণ পৃথিবীতে আর কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই। তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নাটকের প্রযোজক জনাব বরকতউল্লাহকে ফোন করে অনুরোধ করলেন- হুমায়ূন আহমেদকে বলুন, নাটকের শেষে বাকেরকে বাঁচিয়ে রাখা যায় কিনা। বরকতউল্লাহ ফোন দিলেন হুমায়ূন আহমেদকে। হুমায়ূন আহমেদ রাজি হলেন না। তিনি স্বাধীনচেতা লেখক। তিনি বিশ্বাস করেন লেখকের স্বাধীনতায়, পরিচালকের স্বাধীনতায়। তিনি স্ক্রিপ্টে যা ভেবে রেখেছেন তাই করবেন। এবং তিনি শেষ পর্যন্ত তাইই করলেন। 

সমগ্র জাতি বাকেরের ফাঁসির পর মুনার সাথে কাঁদলেন। হুমায়ুন আহমেদ যদি দর্শক চাহিদার কথা ভেবে গল্প পরিবর্তন করতেন তাহলে হয়তো আজকে এখন পর্যন্ত সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক কোথাও কেউ নেই হতো না।

আমরা যখন থেকে দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নাট্যকারের স্বাধীনতা হরণ করলাম, সেদিন থেকেই আমরা আমাদের পথ হারাতে থাকলাম। দর্শকের প্রত্যাশা ও চাহিদা মেটাতে গিয়ে আমরা দর্শককে চমকে দেয়া, দর্শকের কল্পনাতীত গল্প বলা ভুলে গেলাম। যেটা দর্শককে আরো বেশি টানতো। 

লেখক, নাট্যকারকে সবসময় তার নিজস্ব গল্প লিখতে দেওয়া উচিত। কারণ সাধারণ মানুষ আজ যা ভাবেন, দেখেন, লেখকরা সেটা বহু আগেই ভাবেন, দেখতে পান। সিনেমা দর্শক চাহিদার কথা ভেবে পথ হারালো। এখন নাটকও তাই। দর্শককে আরো আকৃষ্ট করতে হলে, নাটক সিনেমাকে আরো এগিয়ে নিতে হলে লেখক নাট্যকারের স্বাধীনতা দিন। তবেইতো নতুন কিছু, চমকপ্রদ কিছু সৃষ্টি হবার সম্ভবনা তৈরি হয়। নয়তো নাটকও হারিয়ে যাবে। থাকবে শুধু ইউটিউব জুড়ে 'ভাবীর সাথে দেবর কি করলো দেখুন', 'ঢেলে দেই', 'ল কাটতে গেয়ে ন কাইটা ফেলছি' জাতীয় কৌতুক অথবা আরো 'ইয়ে' জাতীয় কিছু একটা। যার নাম সট ফ্লিম বা এক্সওয়াইজেড যাইই হোক।

লেখক: নাট্যাভিনেতা

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর