নভেম্বর ৫ আজীবন মনে রাখবার মতো দিন। আন্দোলনে গিয়েছিলাম সাংস্কৃতিক কর্মীর যে দায়বদ্ধতা থাকে সেখান থেকে, বিবেকের তাড়নায়। সবাই বলে দ্রোহের কবিতা আমার কণ্ঠে বেশ ভালো যায়, দ্রোহটা আমার স্বভাবজাত। অন্যায় দেখলে আমি চুপ করে থাকিনি কোনোদিন সেটা ঘরে বা বাইরে যেখানেই হোক। কিন্তু কাউকে অসম্মান, আঘাত করা, হেয় করা আমার ধাতে নেই, আমি প্রতিবাদটাও ওই ভাষায়ই করি, সব সাংস্কৃতিক কর্মীও তাই করে। আমাদের শিক্ষা এই
অথচ সেই আমাকেও বলা হলো শিবির এবং এইভাবে আমার তলপেটে লাথি দেয়াকে জাস্টিফাই করা হলো। আমার শিক্ষককে মাটিতে ফেলে পেটানো হলো আমার বন্ধুকে পেটানো হলো এবং সেখানে আমরা মেয়েরা ব্যারিকেড দিলাম যেনো স্যারের গায়ের আগে আমাদের গায়ে মার লাগে। ঠিক তখন কুমিরের কান্না দেখাতে ছাত্রলীগ আসলো এবং স্যারকে উদ্ধারের নাম করে পা ধরে টেনে নিয়ে গেলো এবং সেখান থেকে বিকেল পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে নিতে দেয়নি।
এতোদিন শুনেছি, অল্প-বিস্তর দেখেছি এদের তাণ্ডব কিন্তু এই পরিস্থিতিতে না পড়লে কখনোই জানতাম না এরা আসলে কি! আমি কিছুই বলবো না, কাউকে অভিশাপ দেবো না, রাগ করবো না, আমি সব ভুলে যাবো; সত্যি বলছি কেবল এইটুকু স্মৃতি ছাড়া।
যারা এই হামলায় নেতৃত্ব দিলেন, নীরব সমর্থন দিলেন এবং এতোকিছুর পরেও প্রতিবাদ করলেন না আজকের পর থেকে আপনাদের চোখের দিকে তাকাতে আমার ইচ্ছা করবে না, যে সকল মহান শিক্ষক, শিক্ষিকা, ছাত্র, বন্ধু, জুনিয়ররা ন্যায়ের পেটে লাথি মারলেন, সত্যের পেটে লাথি মারলেন, পাজর ভাঙলেন আমি তাদেরকে সবিনয়ে অনুরোধ করছি আপনাদের সাথে আমার হৃদয়ের বন্ধন কেটে গেছে। ক্যাম্পাসে হয়তো আর একবছর দেখবো বড়জোর, আমাকে ফেসবুক থেকে এখনই রিমুভ করে দিন। আপনাদের প্রত্যেককেই আমি চিনি, এই ঘটনার পর আপনাদের ফেসবুক বন্ধু হয়ে থাকবার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে এ পর্যন্ত ৩ বার পেইনকিলার দেয়া হলো, ব্যাথাটা কমছে না, আমার পাশের ওয়ার্ডে আমার বন্ধু, জুনিয়র কাতরাচ্ছে। এই ব্যথা নিয়েও তাই লিখলাম। সত্যি বলছি আপনাদের আমার প্রয়োজন নেই। আমি আমার প্রিয়জনদের চিনে গেছি, আমি আমার মানুষ চিনে গেছি।
শুনে রাখুন এই ব্যথাই এদের শক্তি, এই ব্যথাই এদের বহুদূর নিয়ে যাবে।
আর মনে রাখুন
"যে আগুন মিটমিট করে জ্বলছিল একজনের মনে, সে আগুন একসময় দপদপিয়ে উঠলো সকলের মাঝে। একবার সকলের মাঝে আগুন জ্বলে উঠলে মূল মিটমিটে আগুন না থাকলেও সমস্যা নেই।"
লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা