ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পিয়াজ সংকট সমাধান শেষে লবণ সংকটের গুজব!
'রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চেষ্টার কারণ ও প্রতিকার'
আনিসুর রহমান

যে দেশের মানুষ খুব সহজেই বিশ্বাস করে পদ্মা সেতুতে কল্লা লাগবে, এবং এ বিশ্বাস থেকে মানুষ শিশুর মাথাকেটে বস্তায় ভরে পদ্মা সেতুর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে প্রস্তুতি নেয়!

ছেলে ধরা সন্দেহে নিরীহ মাকে পিটাতে পিটাতে মেরেই ফেলে! কেউ বাঁচাতেও আসেনা! সে দেশে লবণ সংকটের গুজব বিশ্বাস না করার কোন কারণ নেই।

রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা এবং সরকারের নীতির উপর নির্ভর করে জনগণের আচরণ কেমন হবে। জনগণের চোখের সমনে ঘুরে বেরাচ্ছে নব্য ধনীরা। যারা বাজারে তোলা তোলার কথা ছিল, আজ তারা শারীরিক চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর ব্যাংকক যায়!

গ্রামের বাজারে যে মহিলা মাটির শানকি হাতে নিয়ে ভিক্ষা করতো, সে মহিলার প্রায় অশিক্ষিত বখাটে ছেলেটি আজ ইউপি চেয়ারম্যান! শিক্ষা দীক্ষা বা জনপ্রিয়তার বলে নয়, রাজনীতির জোরে, নেতার আশির্বাদে!

এখন সেই ছেলে বাজারে চা দোকানে বসে একলাখ টাকার বান্ডেল মাঝে দিয়ে ভেঙে খরচ করে! শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকদের চারিত্রিক সনদ দেয়! জনগণ এসব দেখে খুবই বিরক্ত এবং হতাশ।

সদ্য সাবেক ছিনতাইকারীরাও এখন নেতা! তারা ডিজিটাল ফেস্টুন গাছে ও খাম্বায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। তারা এখন সমাজে হিসাবের লোক , মন্ত্রী এমপির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে। তাদের জন্য মাননীয়রা ওসিকে ধমকায়, দারোগা ট্রান্সফার করে দেয়!

টাকাই এখন সব কিছু। যার টাকা নাই, বাড়ি গাড়ি নাই, তাকে কেউ পোছে না, তার কোন মর্যাদা নাই। তাই সমাজের সর্বত্রই এখন ধনী হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর, মানুষ নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। এখন শোনা যাচ্ছে শুদ্ধি অভিযান শেষ হয়ে গেছে! বাংলাদেশে সাত আট জন দুর্নীতিবাজ লোক ছিল, তারা ধরা পড়ে গেছে!

দেশে আর দুর্নীতিবাজ, মাস্তান, কালো টাকা, চোরাকারবারী, জমি দখলদার, অবৈধ অস্ত্র এবং বৈধ অস্ত্রে অবৈধ প্রদর্শক, যারা সবচাইতে বেশি ভয়ঙ্কর এবং দলীয় সমর্থনের জন্য ক্ষতিকর, তারা আর নাই!

শুদ্ধি অভিযান সমাপ্তির খবরে অথবা অতি ধীরগতির কারণে, তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে দুর্নীতিতে আত্মনিয়োগ করেছে ।

তারা পিয়াজ সংকট, লবণ সংকটের গুজব তুলে কিছু কামিয়ে নিতে চাচ্ছে। সামনে হয়তো তেল সংকট, চিনি সংকটের গুজব অথবা অন্য কোন গুজবের সুবাদে কেউ কেউ ধনী হয়ে এমপি মন্ত্রী মেয়র চেয়ারম্যান হবে!

বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদ দেখে সাধারণ মানুষ খুবই আনন্দিত হয়েছিল। তারা প্রত্যাশা করছিল বাদ যাওয়া মন্ত্রীদের মধ্য থেকে, হঠাৎ ধনি হয়ে যাওয়া দু'একটাকে সরকার ধরবে ।

তাদের লুটের অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করে, তাদের আগের মতো ভিখারি বানিয়ে দিবে। কিন্তু তা এখনো হয়নি ।

কঠিন বিচার করেও দুর্নীতি বন্ধ করা কঠিন হয়, আর সহানুভূতি দেখালেতো দুর্নীতি বন্ধের কোন ব্যবস্থাই থাকে না ।

চীনের মতো এত কঠিন শাসনের দেশেও সেদেশের রেলমন্ত্রী দুর্নীতি করে ধরা পরেছে! সরকার সেই মন্ত্রীকে দশ বছর জেলে রেখে বিচার শেষে ফাঁসি দিয়েছে।

মানুষের সামনে এরকম অসংখ্য নজির স্থাপন করতে হবে সরকারকে। তাহলেই সাধারণ মানুষ, ন্যায় নীতিবান মানুষ ভরসা পাবে, লোভী নেতারা বা আমলারা অন্যায় করতে সামান্য ভয় পাবে, ঘুষ খেলেও লুকিয়ে খাবে।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর