ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

একজন রাজীব এর জীবনী (৬)
দেবী গাফ্ফার
অভিনেতা রাজীব ও দেবী গাফ্ফার

পেট্রো বাংলায় সম্মানের সাথে কাজ চলতে থাকে।

এখানেও চলার পথে কাজী হায়াৎ সাহেব,পরিচালক সাত্তার সাহেবের সাথে পরিচয় হয়।

কাজী হায়াৎ সাহেব এর খোকন সোনা ছবিতে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সাথে রাখে আল্লাহ মারে কে ছবিতে ও। ছবির নামের সাথে জীবনের মিল খুঁজে পেলো যেনো। পরিচালক মনে করলেন ফিল্ম এর নায়ক এর সাথে এই নাম মানানসই না। জীবনের কি পরিহাস,আবার নাম পাল্টালো। নাম হলো রাজীব। এই দুই ছবিতে নায়ক হিসেবে কাজ শুরু হলো। রাখে আল্লাহ মারে কে দর্শক নিলো না। খোকন সোনা মোটামুটি হিট। সিনেমা করতে হলে, আর ও সময় দিতে হবে। চাকরি অভিনয় এক সাথে হয় না। চাকরিতে ইস্তফা দিলেন।

পরিচালক আবুল খায়ের সাহেব খেয়াল করলেন, তার অভিনয় দক্ষতা আছে। ভরাট কণ্ঠ, চোখের ব্যবহার দুর্দান্ত। রাজীব সাহেবকে বুঝালেন, আপনি ভিলেনের চরিত্র করলে ভালো করবেন। রাজী হয়ে গেলেন। বিদ্রোহী ছবিতে ভিলেন এর কাজ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।

বিদ্রোহী ছবি, শুটিং এর প্রথম দিন। পরিচালক বললেন, সোহেল রানা সাহেবের সাথে আপনার ফাইট। আপনি উনাকে মারবেন, উনি আপনাকে মারবেন। ক্যামেরা চালু হলো। রাজীব সাহেবের এক ঠুসিতে পারভেজ ভাই ছিটকে পড়লেন। সেটে হুলস্থুল, কোথাকার রাজীব ধরে আনা হয়েছে, ফাইট এর আগা মাথা জানে না। এমন অপ্রীতিকর কাজ কি করে হলো। পালাতে পারলে বাঁচে। ওস্তাদ এর কাছে গেলেন ফাইট শিখার জন্য। এই সব ছবিতে তেমন কোন টাকা-পয়সা পাননি। রাজা বাজার, পরে নূরজাহান রোডে মেসে থাকেন। ৮৩ সালের এপ্রিল এ আমার সাথে পরিচয়। আমার কাজিন ওস্তাদ জাহাঙ্গীর সাহেব এর বাসায় বেড়াতে আসি। ওখানেই আমাকে দেখেন। ওস্তাদ এর কাছে ফাইট শিখতে আসেন। সাথে ঘোড়া চালানো ও শিখেন। যেদিন ফাইট শিখার ক্লাস থাকে না সেদিন ও এসে বসে থাকতেন, আমাকে এক নজর দেখার আশায়।

উনি আমার জন্য পাগল বুঝতে পারার পরেও আমার মধ্যে কোন প্রেম আসে না। প্রতিদিন আসাটাও আমার জন্য ঝামেলা হয়ে যায়। একমাস পর আমি কক্স বাজার চলে যাই। ওস্তাদ এর বাসায় রাজীব সাহেব এর আসা থামে না। আমার চাচী, যাকে আমি মেঝো মা বলি,উনিও মেঝো মা বলা শুরু করেন। ছোট ভাই রহিম কে জিজ্ঞাসা করেন, দেবীর কোন খবর আছে? একই প্রশ্ন প্রতিদিন। মেঝোমার কাছে আমাকে বিয়ে করার কথা বলেন। আমি রাজি না। এভাবে দুই বছর পার হয়।এর মধ্যে উনি আমার সাথে দেখা করার জন্য কক্স বাজার যান। আমি বাসায় থেকে ও নাই বলতে বলি। মন খারাপ করে চলে গেলেন। দুই বছর প্রতিদিন একবার ওস্তাদের বাসায় আসতেন, একটিবার যদি আমার রাজি হওয়ার সংবাদ পান। মেঝো মা কক্সবাজার যান। আমাকে বুঝাতে থাকেন, রাজীবের মতো ভালো মানুষ হয় না। পৃথিবীতে কেউ নেই। একা মানুষ, তুই সুখী হবি। এক সময় আমি রাজি হই আমি ঢাকা আসবো। তবে শর্ত আছে, রাজীব সাহেবের ইন্টারভিউ নিবো। তারপর সিদ্ধান্ত নিবো ফিল্মের লোক বিয়ে করবো কি না। ৮৫ সাল, এক ছেলেকে দিয়ে এফডিসিতে খবর পাঠাই, আমি ওস্তাদের বাসায় আছি। যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে আমার সাথে যেনো দেখা করেন। রাত একটা, তাজমহল রোডের বাসার সামনে বেবি ট্যাক্সি থামে। রক্তাক্ত সাদা সার্ট কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ নিয়ে রাজীব সাহেব কলিং বেল এ হাত রাখেন।

‘চলবে...’

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত



এই পাতার আরো খবর