ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সেদিনের লাথি আমার মনোকষ্টের কারণ কখনো হয়নি
দেবী গাফফার
দেবী গাফফার

বিয়ের কয়েক মাস পর, ৮৬ সাল।

জলিল ছিলো আমাদের রান্নার বাবুর্চি। ৫০০ টাকা ওর বেতন। তো প্রতিদিনের মেন্যু ছিলো, কই মাছের দোপেঁয়াজা সকালে সুজির হালুয়া, আটার রুটি। এত টাকা বেতন, (তখন পাঁচশ’ টাকা আমার কাছে অনেক বেশি) উনাকে বলি, জলিলকে এত টাকা বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেন। বাসার কাজ আমি নিজে করবো। মাসে পাঁচশ’ টাকা বাঁচলে বছরে ছয় হাজার টাকা বাঁচবে। আমি গাধি একবারও ভাবলাম না, রান্না তো আমি পারি না। কাপড় ধোঁয়া, ঘর মোছা পারলাম। রান্নাও করলাম। দেশি মুরগির ঝোল। রাত দেড়টার দিকে দু’জন খেতে বসি। ভাত মুখে দিয়েই জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি রান্না করেছো। কেনো ভালো হয়নি? মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই, এক লাথিতে আমি মাটিতে। তখন জয়-বিজয় আমার পেটে। উনি না খেয়ে উঠে গেলেন। আমি হামাগুড়ি দিয়ে কোন মতে উঠে নিজের অখাদ্য রান্না মুখে দিলাম। ওয়াক থু। মুরগি রান্না করেছি আদা রসুন ছাড়া। ঠিকমতো কষানো হয়নি। শুরু হলো রান্না শেখার চেষ্টা। কার কাছে শিখবো, আমি তো এই অচেনা ঢাকা শহরে কাউকে চিনি না। পরবর্তীতে সেই আমি, পাঁচশ’ লোকের রান্না একাই পারি। সেদিনের লাথি আমার মনোকষ্টের কারণ কোনদিন হয়নি। রান্না না পারার লজ্জায় আমি কুঁকড়ে গিয়েছিলাম। কথা হলো, না জানার মধ্যে কোন অপরাধ নেই। জানতে না চাওয়াটাই অপরাধ।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/শফিক



এই পাতার আরো খবর