ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‘মাচিন, আমি তোমাদের ছাড়া বাঁচতে চাই না’ (১)
দেবী গাফফার
দেবী গাফফার

(সত্যি ঘটনা )

‌‌‌'চিঠি ৮১ সাল' 'আমার মাচিন' আমার প্রশংসা কর আর বদনাম কর আমি তোমাকেই ভালোবাসি। আমাকে ছাড়া তুমি-বাবুরা কেউ ভালো নেই জানি। তোমাদের ছাড়া একদিনও কোথাও থাকিনি । এই ব্যথা সহ্য করা আমার অভ্যাসে নেই, তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগও নেই। কাল কি হবে জানি না, বেহায়া চোখগুলো সময়-অসময় মানে না । আলাদা তো হওয়ারই কথা ছিলো না মাচিন।

আমি মুসলমান তুমি বুদ্ধ তাতে কি? তুমিই তো বলতে ভালোবাসার কোন ধর্ম হয় না।

বাংলাদেশে আমার কেউ নেই, রাতদিন তোমাদের কথাই মনে পড়ে। আমি যেনো এক নীড় হারা পাখি। এভাবেই হয়তো একদিন মরণ এসে নিয়ে যাবে। প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে তোমার অসহায় মুখখানা, কানে বাজে 'বাবা' 'বাবা' ডাক। রেঙ্গুন ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের সাথে আড্ডা ,মিছিল। আমি সত্যের পথে লড়াই করতে চেয়েছিলাম। মাচিন, আমার মাচিন। তুমি এতো রেগে আছো আমার কোন চিঠির উত্তরই দাওনি। তাতে কি? আমি তোমাকে চিঠি লেখা একদিনের জন্যও থামায়নি। ভেবেছিলাম আমার হাতের ভাগ্য লেখাই একদিন তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। এখন তো ভাগ্যের ওপরও বিশ্বাস চলে যাচ্ছে। দেখো ভালোবাসার কি অদ্ভুত রীতি। পেয়ে গেলে খুনসুটি-ঝগড়া ,মান-অভিমান কতো কি। আর বিচ্ছেদে? কেবল ভালোবাসার সুখস্মৃতি টুকুই মনে পড়ে। আমার বাচ্চারা, আমার মাচিন- আমি তোমাদের ছাড়া বাঁচতে চাই না। তোমার চোখের লেপ্টানো কাজল দেখে মানুষ হয়তো বলে আহারে। আমি কথা দিচ্ছি তোমার চোখের কাজল কোনদিন লেপ্টাতে দিবো না, যতদিন বাঁচবো। আমার ধৈর্য্যের আর পরীক্ষা নিওনা, আমাকে আর শাস্তি দিও না। আমাদের প্রেমের প্রথম কথা ছিলো, বাহ! আপনি বেশ হ্যান্ডস্যম তো? সেই ছোট করে বলা, আজকে আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে যে তোমাকে ছাড়া বাঁচাই মুশকিল হয়ে গেছে। শুকরিয়া আল্লাহ্, ভালোবাসার কোন বয়স হয় না। আসলে আমি বাঁচবো না মাচিন। ‘আলাল’ এই চিঠির ঠিকানা ছিলো রেঙ্গুন। যথা সময়ে মাচিন চিঠি পেয়েছিলো। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভীষণ ভয় ছিলো, একেতো বিদেশি ভাষা জানে না। আত্মীয়-স্বজন সব রেঙ্গুন। ভাবতে থাকে- জীবন মাচিন আর ওর দুই ছোট্ট শিশুর ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড় করাবে আল্লাহ্ জানে। মনস্থির করলো ছেলে দুইটার হাত ধরে রওয়ানা দিবে, নদী-সমুদ্র-পাহাড় পার হয়ে বাচ্চাদের বাবার কাছে পৌঁছাতে হবে। বাবার বাড়ির কাউকে বলা যাবে না, ওরা যদি জানতে পারে মাচিন বাংলাদেশ যাবে- প্রয়োজনে হাত-পা ভেঙে ফেলবে তারপরও মুসলমান স্বামীর কাছে পৌঁছাতে দিবে না। রেঙ্গুন থাকতেই মাচিন এর মা-বাবা কোনদিন বৌদ্ধ-মুসলিম বিয়ে মেনে নেয়নি।

মনস্থির করেই ফেললো, যে করেই হোক বাংলাদেশ পৌঁছাবে। রাতের অন্ধকারে বাচ্চাদের হাত ধরে রওয়ানা দিলো। পিছনে পড়ে রইল বিশাল দোকান এত বছরের সাজানো সংসার, মা-বাবা ও ভাইবোন।  আকিয়াব, বুদিঠউ মংডু হয়ে নাফ নদী হয়ে কক্সবাজার পৌঁছালো । কালুর দোকানের সাথে ছোট্ট দুই রুমের বাসা মন্দ না। ভালোবাসার সংসারে একে একে আরও তিন বাচ্চা আসলো। পাঁচ বাচ্চা নিয়ে সুখের সীমা রইল না। পাশের এলাকার এমপি সাহেব সম্পর্কে আলালের(ছদ্মনাম) ভাই হন। হঠাৎ একদিন এমপি সাহেব এর আগমন। চা খেতে খেতে এমপি সাহেব বলেন, মোনা আমার ছোট বোন, কক্স বাজার কলেজে বিএ পড়ছে। এখানে ওর একা থাকা সমস্যা । আপনাদের কোন অসুবিধা না হলে আমি চাই মোনা আপনাদের সাথেই থাকুক। এমপি সাহেব এর বোন বলে কথা, গোলদিঘির পাড়ে বিশাল বাড়ি নেওয়া হলো। এখানে একটু বলে নিই, আলাল মাচিন এর জুড়ি যেনো পরম যত্নে আল্লাহ্ নিজ হাতে তৈরি করেছেন । বাচ্চাগুলো এক একটা পুতুলের মতো। সবাই মিলে রান্না খাওয়া হৈচৈ করে দিন কখন পার হয়ে যায় মাচিন টের পায় না। একটাই সমস্যা মাচিন বাংলা বুঝে না। মোনা আর আলাল সারাদিন এত কি কথা বলে? আপনারা চাইলে বাকি কিচ্ছা কালকে বলবো। বলবো কি? ‘চলবে’

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/শফিক



এই পাতার আরো খবর