ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

একজন সেলেব্রেটি চিকিৎসক আবার এই ঘটনার সাফাই গেয়েছেন
শওগাত আলী সাগর
শওগাত আলী সাগর

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ‘নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা’র দাবিতে নাগরিকদের বেশ সোচ্চার দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসকদের নিয়ে সাধারণ নাগরিকরা যতোটা উদ্বিগ্ন, যতোটা সোচ্চার তাতে যে কারো মনে হতেই পারে-বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মাঝ সমুদ্রে ফেলা দেয়া হয়েছে। একই সাথে আরও একটি ভাবনার তৈরি হতে পারে, যে চিকিৎসকরা নিজেরাই বিপদে, যাদের নিজেদেরই সুরক্ষা নাই, তারা নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা কিভাবে দেবেন?

ঢাকার বন্ধুদের অনেকেই বলছেন-চিকিৎসকরা আসলে করোনার চিকিৎসা দিচ্ছেন না। তারা করোনার রোগী এলে ভয়ে কাছেই যাচ্ছেন না। এই তথ্য কতোটা সত্য তা আমরা নিশ্চিত নই। তবে করোনার ভয়ে হাসপাতালে ডাক্তাররা চিকিৎসা দেননি বলে কানাডা থেকে দেশে যাওয়া একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। একজন সেলেব্রেটি চিকিৎসক আবার এই ঘটনার সাফাই গেয়ে বলেছেন-আমি ডাক্তারদের দোষ দেই না, কারণ তাদের হাতে অস্ত্র না দিয়ে যুদ্ধে নামিয়েছেন। এমন একটি অনৈতিক কাজ করা এবং তাকে সমর্থন করার মতো মানুষ যে দেশে পাওয়া যায় সেদেশে করোনার চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার যথেষ্ট কারণ আছে।

ডাক্তার বন্ধুদের সুরক্ষার দাবির কথায় আসি। ডাক্তারদের অনেকগুলো সংগঠন আছে বাংলাদেশে। তাদের কেউ সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে দেনদরবার করেছে, সরকারকে জানিয়েছে এমন কোনো তথ্য আমাদের চোখে পড়েনি। তবে সাধারণভাবে চিকৎসকদের সমালোচনায় মশগুল থাকা দেশের নাগরিকদের নিজেদের পক্ষে নিতে পেরেছেন ডাক্তাররা। সারা দেশের ডাক্তার সাহেবদের পক্ষে একটা সাহনুভূতির বর্ম তৈরি হয়েছে। একই সাথে করোনা রোগীদের অবহেলা করার একটা উপলক্ষ্য ও তৈরি করে দিয়েছেন। আচ্ছা, একটা প্রশ্ন করি, বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে কি ডাক্তার সাহেবদের পিপিই একদমই নেই। বাংলাদেশের হাসপাাতল, ক্লিনিকগুলোতে এতো যে সার্জারি হয়, সেখান কি পিপিই ব্যবহার করা হয় না। সেগুলো ব্যবহার করেও তো তারা চিকিৎসা কর্ম শুরু করতে পারেন। করোনার স্ক্রিনিং পর্যায়ে তো এতো কিছুর দরকারও পরে না বলে শুনেছি।

ডাক্তার সাহেবদের ’সুরক্ষা’র প্রশ্নটা এখন আসছে কেন? পৃথিবীতে করোনার আবির্ভাব ঘটেছে বেশ কয়েক মাস আগে। চীনে যখন এর প্রাদুর্ভাব ঘটে, তখন আমাদের ডাক্তার সাহেবরা কি এটি নিয়ে কোনো ধরনের পর্যালোচনা করেছিলেন? কোনো কারণে বাংলাদেশের এটি ছড়িয়ে পরলে কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, কি চিকিৎসা দেয়া হবে, চিকিৎসা দেয়ার কতোটা সক্ষমতা আছে এগুলো নিয়ে তারা কি কোনো ধরনের আলোচনা পর্যালোচনা করেছিলেন? তারা নিজেদের প্রস্তুতি এবং সুরক্ষার জন্য কি কি দরকার সেগুলো কি নির্ধারণ করেছিলেন? সরকারকে কি এইসব তথ্য জানিয়েছিলেন? নাকি তারাও ভেবেছিলেন বাংলাদেশের করোনা হানা দিবে না? ভেবে থাকলে কিসের ভিত্তিতে ভেবেছিলেন। বাংলাদেশের করোনা এসে পৌঁছার আগে বেশ খানিকটা সময় পাওয়া গিয়েছিলো। সেই সময়টায় তারা কি করেছেন। এই কাজগুলো না করে থাকলে আমি বলবো ডাক্তাররা অনৈতিক কাজ করেছেন, অপরাধ করেছেন।

কেবল বাংলাদেশ নয়-সারা বিশ্বই এখন কঠিন একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি দেশই সম্মিলিতভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে। তার ফ্রন্টলাইনে আছে চিকিৎসকরা, স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা। এমন বিপদের সময় মানুষ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের উপর ভরসা করে, আস্থা রেখে বাঁচতে চায়। বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম হবে কেন? বাংলাদেশের মানুষও চিকিৎসকদের উপরই ভরসা করবে, তাদেরই আশ্রয়স্থল ভাববে। করোনা আসলে কি, এটি প্রতিরোধে কি করতে হবে-এই সব তথ্য নিয়ে চিকিৎসকদেরই মানুষের সামনে দাঁড়াতে হবে।

ডাক্তার সাহেবরা বিপদে আছেন-এই প্রচারণা না করে, জাতির এই ক্রান্তিকালে ফ্রন্টলাইন প্রোটেক্টর হিসেবে ডাক্তার সাহেবরা যে মহান কাজগুলো করছেন, আসুন সেগুলো সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলি। মানুষের মনে সাহস যোগাই। আর ডাক্তার সাহেবরা সরকারের সঙ্গে তাদের কি কি প্রয়োজন সেগুলো নিয়ে জরুরি আলাপটা সেরে ফেলেন দ্রুত।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) লেখক : প্রকাশক ও সম্পাদক, নতুন দেশ ডটকম।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন



এই পাতার আরো খবর