ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

এটা কি সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত?
শওগাত আলী সাগর
শওগাত আলী সাগর

করোনাকে অনেকেই বলতেন- এটা না কি সাম্যবাদী ভাইরাস। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে ফুটপাতের ভিক্ষুক কাউকেই সে ক্ষমা করে না। কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দেশ না। এই দেশের সরকার কিংবা সরকারের নানা পর্যায়ের দায়িত্বে যারা আছেন- তারাও সাম্যবাদী না। 

বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যাদের হাতে- তারা আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর। মনমানসিকতায়ও তারা অত্যন্ত সংকীর্ণ। করোনাভাইরাসের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে গিয়ে তারা আবারো তার প্রমাণ দিলেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষজন চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না, হাসপাতালে নানা অব্যবস্থার চিত্র আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি। অনেকেই মশকরা করে বলতেন, ভিআইপিরা, রাজনীতিকরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের এখন এই স্বাস্থ্যসেবাটা দেখার সুযোগ হতো। কারণ এখন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু যে দেশের শাসন ব্যবস্থাই স্বার্থপর এবং আত্মকেন্দ্রিক- সে দেশের ভিাইপিরা নিজের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করবে না- এটা ভাবা বোকাদের কাজ। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে- ’কোনো ভিআইপি নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সুবিধা আছে— এমন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা করানো হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, বাংলাদেশে ভিআইপিদের জন্য আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালেও চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ভিআইপিদের চিকিৎসা অ্যাপোলো হাসপাতালে দেওয়ার জন্য কথাবার্তা চলছে। এছাড়া চিকিৎসকরা আক্রান্ত হলে গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে আলাদাভাবে। 

এই উদ্যোগটাকে আমার খুবই অশ্লীল মনে হয়েছে। যখন দেশের মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছে না, হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসকদের সুরক্ষার অভাব, চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে- এগুলো সমাধানের কার্যকর কোনো উদ্যোগ কোথাও নেই। তারা ব্যস্ত নিজেদের সুবিধা নিয়ে, নিজেদের স্বার্থ নিয়ে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়ে গেলে স্বতন্ত্র রাজকীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য তারা ব্যস্ত হয়ে গেলেন। জনগণের প্রতি ভালোবাসা কিংবা দায়িত্ববোধের কথা বাদই দিলাম- চক্ষু লজ্জা আছে এমন কারো পক্ষেই এই ধরনের সুযোগ নেয়া কঠিন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা কেমন- এটা আমাদের সরকারের নীতি নির্ধারকরা ভালোই জানেন। কিন্তু এ নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। সামান্য হাঁচি কাশিতেও তারা দেশের বাইরে চলে যান বলে তাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত নিয়ে না ভাবলেও চলে। আজ যখন বিদেশে যা্ওয়ার পথ বন্ধ তখন তারা নিজেদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে ফেললেন!

ভিআইপি, নীতি নির্ধারকরা বিদেশে নিজেদের চিকৎসা করান বলেই কখনো দেশের চিকিৎসাসেবার উন্নয়নের কথা তারা ভাবেননি। করোনাকালে নিজেদের আলাদা ভিআইপি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ থেকেও তারা চোখ ফিরিয়ে রাখবেন।

আচ্ছা, এটা কি সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত? নাকি স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর অদক্ষতার অভিযোগ ঢাকতে স্বাস্থ্য অধিদফতর নিজেরাই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? নিজেদের অন্যায়টা ধামাচাপা দিতে এটা কোনো উৎকোচ নয় তো!

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, নতুন দেশ ডটকম। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) 

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম



এই পাতার আরো খবর