ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সেই অধিকার জন্মালো কোত্থেকে, সেটিও জানতে চাই
ইফতেখায়রুল ইসলাম
ইফতেখায়রুল ইসলাম

আমি কাঁদলাম

আমি বললাম

আপনি শুনলেন 

শুনে রায়ও দিলেন.... 

এই রায় অস্থির সমাজের কতিপয় মহান বক্তাগণ কর্তৃক নিরুপিত মৌখিক শাস্তি! যদিও এই মৌখিক শাস্তির বিষয়টি যে, অনেকটা বিজ্ঞ আদালতের রায়ের মত শোনায়, সেটি তাদের মাথায় থাকে কিনা কে জানে! 

আমাদের কেউ কেউ মনে করেন, কিছু একটা বলে দিলাম মানেই জিতে গেলাম  আচ্ছা, আপনার অযথা প্রদানকৃত রায়ে এই যে একটা অঘোষিত ও অদৃশ্য চাপের সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে যখন কোনো নির্দোষ ব্যক্তির মুন্ডুপাত হয়, তার দায় কি এ জীবনে আপনি নিয়েছেন বা নিতে শিখেছেন?

একজন অপরাধীরও যে নিজের অবস্থান থেকে বলবার আছে, সেটি আমরা ভুলেই গেছি বলতে গেলে! অথচ আইনের সৌন্দর্য এখানেই! অপরাধীর কথা বাদই দিলাম অপ্রমাণিত অপরাধীকে কেন প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আমরা দোষী বলে চালিয়ে দেই সেই প্রশ্নের উত্তরই তো নেই কারো কাছে!

আমি নির্যাতিত অথবা নির্যাতিতা! হতেই পারে আমার সাথে অন্যায় হয়েছে, হতেই পারে আমি অত্যাচারের শিকার! আবার যাকে নির্যাতকের ভূমিকায় দেখানো হচ্ছে, হতে পারে উল্টো তিনিই নির্যাতনের শিকার! কিন্তু নাহ্, এই সমাজ যাকে নির্যাতক ও নির্যাতিতের ভূমিকায় দেখতে চায়, সেটাকেই আমরা প্রকারান্তরে নানা আঙ্গিকে জাস্টিফাই করে দেয়ার চেষ্টা করি! কি ভয়ানক এই চর্চা, কেউ ভাবছে না! নিজের উপরে আসার পর উপলব্ধি হয়, হায় হায় বড্ড দেরি হয়ে গেল যে! 

এই সমাজে আমাদের অনেক মা, বোনেরা নির্যাতনের শিকার হন এবং এর প্রেক্ষিতেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন! সত্যিকারের ভিকটিমের জন্য এই আইন একটি রক্ষাকবচ! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, খবর নিয়ে দেখুন, বিজ্ঞ আদালতে এই আইনেই বানোয়াট মামলার সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি! এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল যেন, আমাদের প্রকৃত অর্থে নির্যাতিত নারীগণ এই আইনকে নিজেদের সুরক্ষার্থে ব্যবহার করতে পারেন। অথচ বছরের পর বছর এই মামলার যথেচ্ছ ব্যবহার করে যাচ্ছেন অসাধু কিছু মানুষ!

আমি কাঁদলেই যদি একটি ঘটনা জাস্টিফায়েড হয়ে যায় এবং মহান বক্তাগণ রায় প্রদান করে দেন এই বলে যে, ইহাই সঠিক! তাহলে তিনটি প্রশ্ন চলে আসে, প্রথমত, হে মহান বক্তা আপনি আমায় বলুন, আপনি বিচারকের ভূমিকায় আসীন হলেন কবে থেকে? 

দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞ আদালত কি আপনাকে রায় প্রদানের অধিকার দিয়েছেন? তৃতীয়ত আপনার বিচারে কি তবে এক পক্ষের কান্নাই একমাত্র সাক্ষ্য! এতো ঠুনকো বিচারের মাধ্যমেই আপনি তবে রায় দিয়ে দেন?  অশিক্ষিত মানুষজন নয়তো এসব বোঝে না, আপনারাও কি তবে বুঝেন না! যদি না বুঝেই এসব বলে থাকেন তাহলে সেই অধিকার জন্মালো কোত্থেকে, সেটিও জানতে চাই? 

সিস্টেমের গলদ নিয়ে আপনি কথা বলতেই পারেন কিন্তু আপনি সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকের ন্যায় আচরণ করতে পারেন না, যদি না আপনি সেই সিস্টেমের অংশীদার হয়ে থাকেন! আর অংশীদারিত্ব থাকলেও আপনি প্রক্রিয়াগত পদ্ধতির বাইরে যেয়ে কথা বলতে পারেন কি? আপনি তো শিক্ষিত, আপনি তো জানেন উভয়পক্ষের বলা এবং তাদের উপস্থাপিত সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করেই রায় প্রদানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়! তাহলে আপনি সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু কান্না দিয়েই ঘটনা বিবেচনায় নেন কোন যুক্তিতে? 

একজন প্রাথমিক অভিযুক্তও দিনশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারেন! তাই শুরুতেই যদি একজনের কান্না শুনে আপনি বলে দেন, অভিযুক্ত অপরাধ করেছে তাহলে আপনি যে সিস্টেমের উপরে যেয়ে নিজে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের মত আরেকটি সিস্টেম হয়ে যাচ্ছেন, সেদিকে খেয়াল রেখেছেন কি?

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: এডিসি মিডিয়া অ্যান্ড পিআর

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত



এই পাতার আরো খবর