ঢাকা, শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নারীবাদ বলে আমার কাছে আলাদা কিছু নেই
রীতা রায় মিঠু
রীতা রায় মিঠু

'রেহানা মারিয়াম নূর' দেখে আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলাম।

ইনবক্সে একজন বলেছে, আমার প্রতিক্রিয়া নারীবাদের বিরুদ্ধে গেছে! উত্তরে বলেছিঃ সিনেমা শেষ করতে রাত গভীর হয়ে গেছিলো, আমার ঘুম পেয়েছিলো বলে অল্পই লিখেছি। এইটুকুতেই নারীবাদ আহত হলে তো আমি নিরুপায়।

আমায় বলো তো, নারীবাদ কি? নারীবাদ কি জলের দরে কিনতে পাওয়া যায়? না-কি নারীবাদ যার তার কাছে বিক্রি করা যায়! না-কি নারীবাদ চায়ের কাপে ধোঁয়া ওঠা চা, চুমুকে চুমুকে শেষ করে ফেলা যায়! শোন সংক্ষেপে বলি, নারীবাদ বলে আলাদা কিছু নেই। নর নারী দুজনেই মানুষ। মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে গেলে দুজনকেই যার যার সুবিধা অনুযায়ী কর্ম করে যেতে হয়।  প্রকৃতি নির্ধারিত গর্ভধারণ করা, সন্তান জন্ম দেয়া, সন্তানকে দেড় দুই বছর স্তন্য পান করিয়ে মাটিতে শক্ত পা ফেলে দাঁড় করিয়ে দেয়া ছাড়া নারী-নরের কর্মের মাঝে শ্রেণি বিভেদ নেই। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে নর হতে হয় না, কবি সাহিত্যিক হতে নর হতে হয় না, রাঁধুনি হতে নারী হতেই হবে এমন না। কলকারখানা, ইঁটের ভাটায় শ্রমিকগিরি শুধু নরেরাই করে না। চুল কাটার কাজ শুধু নরসুন্দরের নয়, বাসন মাজার কাজ নারীর নয়, গার্মেন্টসে সেলাইকল শুধু নারীই চালায় না।

জ্যোতির্বিদ শুধু নর হয় না, কত হাজার বছর আগে জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী খনা সত্য বচন বলে গেছিলেন, খনার জিভ কেটে নেয়া হলেও খনার বচন এত হাজার বছর পরেও সত্য বচন হিসেবেই প্রমাণিত হয়েছে। লাঠি তরোয়াল বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ শুধু নরেই করে না। আরবের হযরত বিবি আয়েশা থেকে শুরু করে ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈ, বাংলার কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার---নরের চেয়ে কে কম শক্তিশালী ছিলেন? তাই আমার কাছে পুরুষের কর্ম, নারীর কর্ম বলেও আলাদা কিছু নেই, নারীবাদ বলেও আলাদা কিছু নেই। আমি আমার কর্মের মাঝেই প্রতিষ্ঠিত হবে আমার ক্ষমতা, আমার মেধা, আমার ধৈর্য্য, কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা, ন্যায়পরায়ণতা সর্বোপরি মানুষ জন্ম লাভের সার্থকতা।

রেহানা মারিয়াম নূর সিনেমায় যদি নারীর শক্তি বুঝানো হয়ে থাকে, নারীবাদ বোঝানো হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলবো, সিনেমায় দেখানো নারীবাদের পুরোটাই ভুল। নারী এমন নয়। নারীর অর্থ ব্যাপক, নারীর ক্ষমতা বিশাল, নারীর স্বপ্ন আকাশের মতো বিস্তৃত। নারীর ধৈর্য পাহাড়ের মতো স্থির, সহনশক্তি মাটির মতো। নারী ধারণ করে, গ্রহণ করে, বহন করে আবার সময়ে বর্জনও করে। নারীর কোন বাদ হয় না। ভারতে কত গুণীজনেই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার পেয়েছেন, কিন্তু আজও শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর নাম সবার আগে উচ্চারিত হয়। বাংলাদেশ নামের সাথে বঙ্গবন্ধু মাখামাখি করে আছে, কিন্তু দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নাম আগামী একশ বছর পরেও সবার আগে উচ্চারিত হবে। এটাই নারী, নারীবাদ বলে আমার কাছে আলাদা কিছু নেই। তার উত্তর পাইনি।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রবাসী লেখিকা। 

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর