ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‘না পাওয়ার বেদনা থাকতে হয়, তা থাকলে মানুষ প্রাপ্তির গুরুত্ব টের পায়’
ইফতেখায়রুল ইসলাম
ইফতেখায়রুল ইসলাম। ফাইল ছবি

ছোটবেলায় ভালো ছাত্র হিসেবে কিঞ্চিৎ খ্যাতি ছিল আমার। তৃতীয় শ্রেণিতে নিজ প্রপিতামহের স্কুলে পড়াকালীন আতিক নামে এক নতুন ভর্তি হওয়া ছেলে, দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় আমাকে কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়ে প্রথম হয়ে গিয়েছিল! বিষয়টা সহজভাবে নিতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। আর মায়ের শাসনের ভয় তো ছিলই! মা আমাদের সাধ্যের বাইরে শাসন করতেন না। 

আমার প্রথম হওয়ার সামর্থ্য ছিল বিধায় আমার বিষয়াদি কঠোরভাবে দেখতেন মা! বিষয় সেটা না, অন্য জেলা থেকে চলে আসা আতিক সমাপনী পরীক্ষায় আমার সাথে পেরে উঠতে না পেরেই কি না, জানি না স্কুল ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যায়! ক্লাস থ্রিতে পড়া শ্যামবর্ণের আতিককে যে আমি এখনো মাঝে মাঝে মনে করি, আতিক তা এ জীবনে জানলো না! 

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন আমাদের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর একজন ছিল শ্রী ভাস্কর আচার্য্য (ড. জন)! ওদের পরিবারের মতো এত ভদ্র, অমায়িক পরিবার আমার চোখে খুব কমই পড়েছে! জন সেসময় ক্লাসে প্রায়ই আমাকে বিঙ্গো লজেন্স খাওয়াতো। জন হালকা একটু অভিমানীও ছিল। ঠিক এক বছর পর জনের পুরো পরিবার ভারত চলে যায়। জনকে বলা হয়নি, ওকে ভীষণ মিস করবো। সুযোগ পাইনি। এত অল্প বয়সের বন্ধুতা শুরু না হতেই শেষ হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক খুঁজেও জনকে আর পাইনি। জন কি কখনো আমাকে মনে করে? 

সপ্তম শ্রেণি পড়াকালে তাবলীগ করতে আসা সাদী নামে একজনের সাথে মসজিদে পরিচয় হয়। ইতালি থেকে আনা একটা গিফট আমি ওকে দেই। কিছুদিন পর ঈদ আসার পর ওর কাছ থেকে ঈদ কার্ড পাই। নারায়ণগঞ্জের সৈয়দপুরের সাদীকে চাইলেই আমি খুঁজে বের করতাম, আমার আর ইচ্ছে হয়নি। যাকে খোঁজে পাওয়া যাবে তাকে খুঁজতে চায় না মন! আর যাকে পাওয়া যাবে না তার জন্য অনন্ত প্রচেষ্টা। মানব মন অনেক জটিল। এই যে ধরে ধরে ক্ষণিকের বন্ধুদের আমি মনে রেখেছি, আমার মনে হয় তারা কখনোই হয়তো আমাকে মনে করে না। আমি ভুলও হতে পারি যদিওবা! 

সময় বয়ে যায়, জীবনে নিত্য নতুন মানুষ আসে। কেউ টিকে যায়, কেউ পড়ে যায়! এটা রীতি! কেউ, কেউ তীব্র ভালোবাসা দিয়ে টিকে যায়, কেউ হয়তো ভালোবাসার অভাবেই ক্ষয়ে যায়! ছোট্ট এই জীবনে যতজন মানুষকে আমি চিনেছি, জেনেছি যারা সত্যিকার অর্থেই অবস্থান তৈরি করতে পেরেছিলেন, আমি তাঁদের ভুলিনি! মস্তিষ্কেজুড়ে তাঁরা গেঁথে আছে, ছিল এবং থাকবে। 

তবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মানুষের না পাওয়ার বেদনা থাকতে হয়, তা থাকলে মানুষ প্রাপ্তির গুরুত্ব টের পায়। জীবন খুব ছোট, সম্পর্কগুলো মূল্যায়ন করতে শিখলে জীবন অর্থবহ হয়। তবে সব কথার শেষ কথা যাই ই করি না কেন, তা যেন আত্মসম্মান বিসর্জনের কারণ না হয়। আত্মসম্মান হারিয়ে গেলে একজন মানুষের আর কিছু টিকে থাকে বলে আমি মনে করি না!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক : এডিসি, ক্যান্টনমেন্ট ও খিলক্ষেত, ডিএমপি।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 



এই পাতার আরো খবর