ঢাকা, রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কলকাতার রেড রোডে ঈদের নামাজ
সুদিন চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা এক অদ্ভুত মহানগরী, প্রকৃতপক্ষেই ‘আনন্দনগরী’। এখানে দুর্গাপূজার উৎসবে গোটা শহর আলোয়, আয়োজনে, মানুষের উৎসাহে জাগরণে রাত কাটায়। খ্রিস্টমাসের উৎসব পার্ক স্ট্রিট আর বো ব্যারাক উপচে ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্র।

পবিত্র ঈদের সকালে কলকাতার রেড রোড বরাবর প্রায় এক লক্ষ নামাজি প্রতি বছর সমবেত হয়ে নামাজ নিবেদন করেন। এমন সম্প্রীতি ও মানব মিলনের মহানগর, আজকের ঈর্ষা, ভেদ বুদ্ধি ও কলহ কলুষিত সময়ে খুব বেশি চোখে পড়ে না। কলকাতায় ঈদগাহ ইতস্তত নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে, পার্ক সার্কাস, রাজাবাজার, গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর, চিৎপুরসহ নানা জায়গায়। তবুও রেড রোডে নামাজ নিবেদনের যে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আমেজ চোখে পড়ে, তা অন্যত্র দেখা যায় না। হাজার হাজার ইসলাম ধর্মাবলম্বীর ভিড়ে সকাল থেকেই রেড রোডে সাজো সাজো রব পড়ে যায়। যান চলাচল আগের দিন থেকেই সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। সরকারি উদ্যোগে রাস্তা সাফাই, মঞ্চ নির্মাণ, বাড়তি জল ও বিদ্যুতের আয়োজন করা হয়।

কবে থেকে যে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ এই অঞ্চল বেছে নিয়ে এমন উৎসবের পরিবেশে উপাসনা করা শুরু করেছেন, তার নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলো বিপুল ভট্টাচার্যের লেখা থেকে। আগে ঈদের নামাজ শহিদ মিনার সংলগ্ন উদ্যানে হতো। বৃষ্টি হলে জলে কাদায় নামাজ অনুষ্ঠান বিঘ্নিত হতো। জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে, বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে রেড রোডে সমবেত নামাজ নিবেদনের আয়োজন করে দেন।

জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কখনও নামাজে হাজির হয়ে উপাসনার অঙ্গে রাজনীতির ছোপ লাগানোর চেষ্টা করেননি। জ্যোতি বসু কখনও রেড রোডের এই অনুষ্ঠান আয়োজনের কৃতিত্ব নিয়ে উচ্চকণ্ঠও হননি। তার মতো সম্ভ্রান্ত মানুষের এ ছিল একেবারেই স্বভাব বিরুদ্ধ। কিন্তু ইদানিং কালে রেড রোডের নামাজে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি ও উৎসবের রাজনীতিকরণের সচেতন প্রয়াস খুবই অস্বস্তিকর ও বিসদৃশ লাগে।

লেখক : সাবেক সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ও সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর