ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কেঁচো সারে সম্মাননা পদক ছাত্রীর, অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর:

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লীর মেধাবী ছাত্রী কুলসুম আক্তার। রংপুর কারমাইকেল কলেজে লেখাপড়ার পাশাপাশী বাবার সহযোগীতায় নিজ বাড়ীতে ভার্মি কম্পোষ্ট (কেঁচো) সার তৈরীতে বিশেষ অববদান রাখায় স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন “জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্মাননা পদক ২০০০”। গত ৩ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি হলরুমে  বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ এবং বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদের যৌথ উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানে এই পদক প্রদান করা হয়। 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশায় অবদান রাখায় দেশের ১৭ জন ব্যক্তিকে এই পদক প্রদান করা।  ওই অনুষ্ঠানে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ভার্মি কম্পোষ্টে বিশেষ অবদান রাখায় পদক প্রাপ্ত হয়েছেন পীরগঞ্জের সফল উদ্যোক্তা কুলসুম আক্তার । 

কুলসুম আক্তার জানান, তিনি বর্তমানে রংপুর কারমাইকেল কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। তারা ৫ বোন। বছর দশেক আগের কথা, কুলসুমের পিতা রবিউল আলম অন্যের জমিতে কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। অভাবের কারণে ২০০৯ সালে সপ্তম শ্রেণীতে উঠলে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় কুলসুমের। বাধ্য হয়ে সে ওই বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে গ্রামের এক বাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে চতরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুজ্জামান কুলসুমের বাড়িতে যান। বাবা-মাকে বুঝিয়ে কুলসুমকে ডেকে নেন। পরামর্শ দেন, স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) অধীনে বিষ মুক্ত সবজি চাষ ও কেঁচো সার তৈরির কৌশল শিখে নেওয়ার। পরে একটা এনজিওতে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করে কুলসুম। বাড়ির এক পাশে চালা তুলে সেখানে সিমেন্টের চারটি রিং স্থাপন করেন। সকাল-বিকাল মাঠে ঘুরে তাজা গোবর সংগ্রহ করে রিংগুলো ভরিয়ে তোলার পর ওই সংস্থার কাছ থেকে ৬০০টি বিশেষ প্রজাতির কেঁচো এনে রিংয়ের ভেতর ছেড়ে দেন। এতে ৩ মাসে চারটি রিং থেকে প্রায় ২০০ কেজি কেঁচো সার পাওয়া যায়। একই সঙ্গে ৬০০টি কেঁচোর বাচ্চাও প্রাপ্ত হন। প্রথম পর্যায়ে কুলসুম ১৫ টাকা কেজি দরে ৩ হাজার টাকার সার বিক্রি করেন। সেই সাথে কেঁচো বিক্রি করেও পান ৬০০ টাকা। এ আয় কুলসুমের চোখ খুলে দেয়। পরে ইট দিয়ে পাকা গর্ত নির্মাণ করে কেঁচো সার তৈরি শুরু করেন। মেয়ের সঙ্গে শ্রম দেয় বাবাও।

২০০৯ সালে সার ও কেঁচো বিক্রি করে সব মিলিয়ে মোট ২৩ হাজার টাকা জমা করেন। এ টাকা দিয়ে অন্যের ৮০ শতক জমি বর্গা নিয়ে কেঁচো সার দিয়ে শসা, লাউ, শিম, করলা চাষ করেন। এ ফসল বিক্রি করে আয় হয় ৭০ হাজার টাকা। এ ভাবে আয় বাড়ে, সাথে বাড়ে চাষের জমিও। সার, কেঁচো ও সবজি বিক্রির টাকায় কেনেন ২৬ শতক জমি। নির্মাণ করেন টিনের বাড়ি।  কুলসুমার সংসারে এখন প্রতিমাসে আয় নূন্যতম ৩০ হাজার টাকা। কেঁচো সার বিক্রির টাকা দিয়ে ৩ বোনকে বিয়েও দিয়েছেন। কুলসুমসহ আরো দু’বোন পড়াশুনা করছেন। তাদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর