ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ভালবাসার নিদর্শন ঐতিহাসিক সুতানাল দীঘি
নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি

পৃথিবীতে ইতিহাস কাঁপিয়ে দেওয়া প্রেম কাহিনী অনেক আছে। কিন্তু এমন প্রেম কাহিনী খুব কমই আছে যার সাক্ষী এখনো পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অমর সৃষ্টি তাজমহলের কথা যদি ধরা হয়, তাহলে এমন নিদর্শন পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ অনন্য কীর্তির পেছনে ছিল একটি প্রেমের গল্প। 

আর এক প্রেমের উজ্জ্বল নিদর্শন কক্সবাজারের টেকনাফের মাথিনের কূপ। টেকনাফ থানায় অবস্থিত কূপটির নিথর জলে মিশে আছে বিষাদ আর বেদনাবিধুর এক অমর প্রেমের গল্প। জমিদার কন্যা মাথিন ও পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্যের অতৃপ্ত প্রেমের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই কূপটি। প্রেমের এই নিদর্শন দেখতে প্রতিবছর ভীড় করে পর্যটকরা। তেমনি এক ভালবাসার নিদর্শন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সুতানাল দীঘি। দীঘিটি কে কখন কোন উদ্দেশে খনন করেছিলেন তার ইতিহাসনির্ভর কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়, মোগল আমলের শেষের দিকে এ গ্রামে সামন্ত রাজার বাড়ি ছিল। আবার কেউ বলেন- এখানে বৌদ্ধ বিহার ছিল। কথিত আছে সামন্ত রাজা তার স্ত্রী কমলারাণীকে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশের জন্য উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। রাণী তখন রাজাকে বলেন, ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে আপনি এমন কিছু দান করুন যা যুগযুগ ধরে মানুষ মনে রাখে। সে মতেই রাজা তখন সিদ্ধান্ত নিলেন অবিরাম একরাত একদিন সুতা কাটা হবে। যে পরিমান সুতা হবে সেই সুতার সমপরিমান লম্বা এবং প্রশস্ত একটি দীঘি খনন করা হবে। এলাকার জনগণ দীঘির পানি ব্যবহার করবে। আর তোমাকে স্মরণ করবে।

এরপর দিনের পর দিন খননকাজ চলে। নির্মিত হয় বিশাল এক দীঘি। এক পাড়ে দাঁড়ালে অন্য পাড়ের লোক চেনা যায় না। কথিত আছে খননের পর দীঘিতে পানি ওঠেনি। িএতে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। কমলারাণী তখন স্বপ্নাদেশ পান “গঙ্গাপুজা কর নরবলি দিয়া,তবেই উঠিবে দীঘি জলেতে ভরিয়া।” স্বপ্ন দেখে রাণী চিন্তিত হয়ে পড়েন। নরবলি না দিয়ে রাণী গঙ্গামাতাকে প্রণতি জানানোর জন্য মহাধুমধামে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দীঘির মাঝখানে গঙ্গাপুজার আয়োজন করা হয়। কমলারাণী গঙ্গামাতার পায়ে প্রার্থনা জানিয়ে বলেন,“কোন মায়ের বুক করিয়া খালি,তোমারে দিব মাতা নরবলি। আমি যে সন্তানের মা,আশায় করিয়া ক্ষমা কোলে তুলিয়া নাও। মা পুর্ণকর তোমার পুজা।”

এরপর হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে দীঘিতে পানি উঠতে লাগল। লোকজন দৌড়ে পাড়ে উঠতে পাড়লেও দীঘির টইটুম্বুর পানিতে রাণী তলিয়ে গেলেন। কমলা রাণী আর তীরে উঠতে পারেননি। সেই থেকে কমলারাণী বা সুতানাল দীঘি নামে পরিচিতি পায় এটি।

উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে মধ্যমকুড়া গ্রামে ৬০ একর জমির ওপর দীঘিটি অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে দীঘিটির অবস্থান। দীঘিটিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর সৌখিন মৎস্য শিকারিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। দূরদূরান্ত থেকে মৎস্য শিকারি ও উৎসুক মানুষের আনাগোনায় এলাকার পরিবেশ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। এ দীঘির মাছ খুব সুস্বাদু বলেও প্রশংসা রয়েছে।

১৯৮৩ সালে এই দীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে“সুতানালি দীঘিরপাড় ভূমিহীন মজাপুকুর সমবায় সমিতি।”বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ১১৮ জন। সব সদস্যই দীঘির পাড়ে বসবাস করেন।

বিডি প্রতিদিন/কালাম



এই পাতার আরো খবর