ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সখীপুরে মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর শপথ স্তম্ভ
অযত্ন ও অবহেলায় দাঁড়িয়ে ২৩ বছর
মোজাম্মেল হক সজল

টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে বহেড়াতৈল এলাকায় ২৩ বছর ধরে অযত্নে অবহেলায় দাঁড়িয়ে আছে একটি শপথস্তম্ভ। এর পাশেই রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর।

১৯৭১ সালের ১০ জুন কাদেরিয়ার ৬টি বাহিনীর কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয় এই বহেড়াতৈল মাঠে। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন করার লক্ষে শপথ নেয়ার সেই দিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নির্মাণ করা হয় এই শপথস্তম্ভ।  

জানা যায়, স্বাধীনতার ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও কাদেরিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এই শপথস্তম্ভ নির্মাণ করার উদ্যেগ নেন।

গাছ পালায় ছেয়ে আছে শপথ স্তম্ভের চারপাশ। তার ভেতরে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। পাশ দিয়ে পরে আছে গরু-ছাগলের মল-মূত্র। পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে এই স্তম্ভটি। স্থানীয়রা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এলাকায় নির্মিত এই শপথ স্তম্ভটি হতে পারতো ঐতিহাসিক একটি দর্শনীয় স্থান। তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন এগিয়ে আসলে মুক্তিযুদ্ধের এই শপথ স্তম্ভটি সংস্কার করে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। 

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, মহান মুক্তিযোদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা দেশ স্বাধীনের লক্ষ্যে শপথ গ্রহণ করেছিল এই বহেড়তৈল মাঠে। তাদের সম্মানে নির্মাণ করা হয়েছিলো এই শপথস্তম্ভ। এখানে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত নিদর্শন ও স্মারকচিহ্নসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, প্রমাণাদি, নিদর্শন, রৈকর্ডপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে জাদুঘরে রাখার পরিকল্পনা ছিল। 

সেই জাদুঘরে একাধিক গ্যালারির ব্যবস্থা থাকত। গ্যালারিগুলোতে প্রদর্শিত হতো বাঙালির ঐতিহ্যের পরিচয় এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের চিহ্ন। দেশভাগ-পরবর্তী পাকিস্তানি শাসন-শোষণের ইতিহাস। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১’এর স্বাধীনতা সংগ্রামের বিমূর্ত চিত্র ফুটিয়ে তোলা হতো চার দেয়ালের মুর‍্যালে। 

একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, ২৫শে মার্চ সংঘটিত গণহত্যা, স্বাধীনতার ঘোষণা, প্রতিরোধ ও শরণার্থীদের জীবনচিত্র। প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক, বাংলার নারী-পুরুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, পাকিস্তান সেনা ও তাদের দোসরদের বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং বাঙালির বিজয় দৃশ্য।

মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনাস্থল বহেড়াতৈলকে ঘিরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটি বাস্তবায়ন হলেন এই স্থানটি আগামী প্রজম্মের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতো বলে মন্তব্য করেন এক স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা।

সখীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার এম.ও গনি বলেন, 'শপথ স্তম্ভটির নির্মাণ কাজ এখনো সমাপ্ত হয়নি। অযত্নে-অবহেলায় পরে থাকা এই শপথস্তম্ভটি রক্ষনাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।'         

বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির 



এই পাতার আরো খবর