ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নীলফামারীতে গাছের শাখা-প্রশাখায় ঝুলছে বাদুড়
আবদুল বারী, নীলফামারী
নীলফামারীতে গাছের শাখা-প্রশাখায় ঝুলছে বাদুড়

উঁচু গাছের মগডালে বাদুড়ের ঝুলে থাকা একসময় ছিল গ্রামগঞ্জের স্বাভাবিক দৃশ্য। তবে এখন গ্রাম-গঞ্জে ঘুরলেও দেখা মেলে না উড়তে জানা একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণিটির।বসবাসের জন্য উপযুক্ত গাছপালা না থাকায় এবং খাবারের সংকটের কারণে বাদুড় আজ বিলুপ্তপ্রায়।

পাখির মতো উড়লেও আকৃতির কারণে বাদুড়ের কদর নেই। নানা কল্প-কাহিনীর আতঙ্ক সৃষ্টিকারী প্রাণী হিসেবে শত প্রতিকুলতার মধ্যেও সোনাখুলি দোলা পাড়া গ্রামের নিভৃত পল্লীতে নির্ভয়ে আবাস গড়ে তুলেছে এসব বাদুড়।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের সোনাখুলি দোলাপাড়া গ্রামের একটি পুরাতন বটগাছে বাসা বেঁধেছে প্রায় শতাধিক বাদুর। বট গাছের শাখা-প্রশাখায় হুকের মতো পা দু'টো আটকিয়ে নিস্তব্ধতায় ঝুলছে অসংখ্য বাদুড়। রাতের অক্লান্ত শ্রমে যেন তারা শুধু একটু প্রশান্তির ঘুম খুঁজছে।

কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি অনার্সের শিক্ষার্থী অন্তরা আক্তার বলেন, বাদুড়- এদের ডানা আছে এবং আকাশেও উড়তে পারে কিন্তু তারপরও এটি পাখি নয়। প্রাণি হিসেবে তাদের চিহ্নিত করা হয়! বাদুড়ের মুখ অনেকটা শিয়ালের মতো। তাদের খরগোশের মতো বড় বড় দু'টো কানও রয়েছে। ছাতার মতো অদ্ভুত দু'টি পাখা। তবে বাদুড়ের বড় বড় দু'টি চোখ থাকতেও সেগুলো দিয়ে তারা দেখতে পায় না।

এক্ষেত্রে বাদুড় তার চোখের দৃষ্টি নয়, কানের শব্দকেই ব্যবহার করে চলাফেরা করে। বাদুড় আসলে পথ চলে শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে। বাদুড় যখন পথ চলে তখন সে একধরনের শব্দ তরঙ্গ বাতাসে ছড়িয়ে দেয়। সেই শব্দ আবার ফিরে আসে বাদুড়ের কানে। বাদুড়ের মস্তিষ্ক প্রতিফলিত শব্দ থেকে বুঝতে পারে সামনের বাধাটা কত দূরে। বাদুড় মূলত ফলভোজি। পেয়ারা, লিচু, জামরুল ইত্যাদি ফলের ঠিকানা খুঁজে বের করতে তারা শব্দ তরঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে নাকের গন্ধ শক্তির ওপরও নির্ভর করে।

সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের সোনাখুলি দোলাপাড়া গ্রামের হরিকান্ত রায় বলেন, ১০ বছর ধরে এরা স্থায়ীভাবে এখানেই আছে। এক সময় আরও বেশি ছিল। এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই দলে দলে ছুটে যায় এরা খাবারের সন্ধানে। ঘুরে বেড়ায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়। ভোরের আলো ফোটার আগেই দলবেঁধে আবার বটগাছে ফিরতে শুরু করে এই স্তন্যপায়ী প্রাণিরা। সারা বছর এখানে নিশ্চিন্তে বাস করে বাদুড়েরা।

পাখি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সেচ্ছসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বাদুড় মানবকল্যাণকারী ও পরিবেশবান্ধব একটি প্রাণি। এরা মানুষের উপকারই করে থাকে। বিশেষ করে কলা ও অ্যাভোকাডোসহ প্রায় ৩০০ রকমের গাছের বীজ ছড়াতে সাহায্য করে এরা। আবার কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষা করে। তাই বাদুড় রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বাদুড়কে অনেক সময় ক্ষতিকর প্রাণি মনে করা হলেও আসলে এটি জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় প্রাণি।

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর