ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বাঁশঝাড়ে বসেছে কাকের ‘বৈঠক’
আবদুল বারী, নীলফামারী

দেখে মনে হয় বাঁশঝাড়ে এ যেন কাকের বৈঠক। সর্বত্রই কাকের অবাধ বিচরণ। যেদিকে চোখ যায় কাক আর কাক। তাই এই গ্রামটি কাকের গ্রাম হিসেবে অতিপরিচিত। প্রতিদিন বিকালে কাক দেখতে লোকজন আসেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। নীলফামারী শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া ও ডাঙ্গা পাড়া গ্রামের দুই বিঘা জমির উপর পুরনো এই বাঁশঝাড়টি যেন পুরোটাই কাকের বাড়ি। 

নীলফামারী পলাশবাড়ি কলেজের প্রভাষক মো. জাফর সাদেক বলেন, কাকের দেহ চকচকে কালো রঙের এবং অধিকাংশেরই শক্তিশালী কালো ঠোঁটের গোড়া পালকে ঢাকা। কাক সর্বভুক। কাক অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও চতুর পাখি। এরা যূথচর, মাঝে মধ্যে খুব বড় দলেও থাকে, কিন্তু একত্রে ঘুমায় না। প্রত্যেক জোড়ার পৃথক বাসা থাকে। বাসা খুব সাধারণ, ডালপালার একটি মাচান। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ই বাসা তৈরি করে, বাচ্চাদের খাওয়ায়। কাক একটি অতি পরিচিত পাখি অর্থাৎ আমাদের পরমবন্ধু। প্রতিদিন ভোর হয় কাকের ডাকে। রাত শেষে যখন ভোরের আগমনীবার্তা আসে তখনি কাক তার কা-কা কণ্ঠে ভোরকে আহ্বান জানায়। অন্য সব পাখির মত কাক হয়তো অত সুন্দর না। কিন্তু কাক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অনেক গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে কাক আছে। আমাদের পরিবেশে অনেক অবাঞ্চিত বস্তু কাক খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। যে সকল বস্তু পরিবেশে দূষণ সৃষ্টি করে, কাক সেগুলো আহার হিসেবে ব্যবহার করে ফলে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়ে না। অন্যদিকে প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় গাছপালা ধ্বংসের কারণে কাক তাদের আবাসস্থল হারিয়ে ফেলছে। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের পরম বন্ধু কাক।

চৌধুরী পাড়া গ্রামের হিরা চৌধুরী বলেন, এই বাঁশঝাড়ে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে কাকেরা নিরাপদে বসবাস করছে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো- খুব ভোরে এসব কাক খাবারের সন্ধানে বেড়িয়ে গেলেও সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে আসে এই বাঁশঝাড়ে। কেউ ইচ্ছে করে কাকের বাসায় ঢিল মারে না। 

নীলফামারী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি আবু মুসা মাহামুদুল হক বলেন, এলাকার মানুষের সাথে কাকের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। কাকগুলো দলবেঁধে বাঁশঝাড়ে পড়ার কারণে কোন বাশেঁরই আগা নেই। যখন ফিরে আসে তখন এক অপরুপ দৃশ্যে মন ভরে যায়। কাকের কা-কা শব্দে ভরে ওঠে পুরো এলাকা। কালো কুচকুচে এসব কাক ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে বলে এই জায়গাটিকে নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। এদের একতা মানুষকেও হার মানায়। একটি কাক আহত হলে বা কেউ ধরতে চাইলে সবাই সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করে। 

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ



এই পাতার আরো খবর