ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ভোরের চা খেতে খেতে কাঞ্চনজঙ্ঘা
সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

শীতের শুরুতেই পৃথিবীর অনন্য আশ্চর্য পর্বতমালা হিমালয় আনন্দ ও নির্মলতার অনুভূতি ছড়িয়ে দেওয়া শুরু করেছে পঞ্চগড়ে। ভোরবেলা এই এলাকার লাখো মানুষের সঙ্গে ঘুম থেকে জেগে উঠছে সুপেয় পানির ঠিকানা বরফের পাহাড় কাঞ্চনজঙ্ঘা। 

সুদীর্ঘকাল ধরে দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের মানুষ সকালে এক কাপ চায়ের উষ্ণতা নিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করে আসছে। শরৎ, হেমন্ত আর শীতকালেই দেখা মেলে শ্বেত শুভ্র এই মহানায়কের। ভোরের আলো মেখে জাগতে শুরু করে কাঞ্চনজঙ্ঘা। 

এরপরই ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টাতে থাকে। অপার সৌন্দর্যের বিস্তৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কাঞ্চনজঙ্ঘার শরীর ঘেঁষে চলে গেছে বিস্তৃত হিমালয়। সবুজ আর কালো রঙ মেখে হিমালয়ও হয়ে ওঠে অপরূপ। 

নানা রঙ নিয়ে খেলা করে কাঞ্চনজঙ্ঘা। জেগে ওঠার শুরুতে টকটকে লাল। সূর্য ওঠার সাথে সাথে কমলা, হলুদ, সাদা। এরপর হঠাৎ হারিয়ে মেঘের আঁচলে লুকিয়ে পড়ে। মেঘ সরে গেলে আবারও উঁকি দেয়। লুকোচুরির খেলা চলে সারাদিন। 

কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতমালায় দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা প্রায় ২৮,১৬৯ ফুট বা ৮,৫৮৬ মিটার। এটি ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয়  সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে চারটি নদীর উৎপত্তি ঘটেছে । নদীগুলো বাংলাদেশেও প্রবাহিত হয়। 

কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে রয়েছে নানা রকমের লোককাহিনী। এর আশেপাশের অঞ্চলটিকে বলা হয় পর্বত দেবতার বাসস্থান। দেবতার নাম 'কাঞ্চনজঙ্ঘা ডেমন।' এটি এক প্রকার রাক্ষস। অনেকে বিশ্বাস করেন অমরত্বের রহস্য লুকানো আছে এই শ্বেত শুভ্র শৃঙ্গের নিচে। 

তবে সবসময় দেখা মেলে না সাদা শুভ্র এই পাহাড়ের। মেঘ আর কুয়াশা মাঝে মাঝেই আড়াল করে রাখে তাকে। তখন অপেক্ষা ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। এ জন্য অনেকে বলে থাকেন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য ভাগ্যও লাগে। 

পঞ্চগড় হিমালয় পর্বতমালার সমতল অঞ্চল। তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব আশি কিলোমিটার। তাই এই জেলাকে বলা হয় 'হিমালয়ের কন্যা।' পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলাসহ জেলার যেকোন প্রান্ত থেকে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখতে বর্তমানে ভিড় করছে হাজারো পর্যটক। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

তেঁতুলিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, পর্যটকদের আনন্দকে আমরাও উপভোগ করছি। তাই তাদের নিরাপত্তা, থাকা, খাওয়ার বিষয়গুলোকে উপজেলা প্রশাসন থেকে তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়াও তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোসহ পর্যটন স্থানগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই আয়োজন চলমান থাকবে। 

বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির 



এই পাতার আরো খবর