ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শীতকালের ‘হাকালুকি’র সবুজাভ রূপ
সাইফুল ইসলাম বেগ, বিশ্বনাথ (সিলেট)

বর্ষায় থৈ থৈ পানি আর বড় বড় ঢেউ। সামনে যত দূর চোখ যায় অবারিত জলরাশি। দিগন্ত ছোঁয়া মেঘের সাথে মিলেমিশে একাকার জল। তখন দেখতে বিশাল সমুদ্রই মনে হয়। স্বচ্ছ-সফেদ জলের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের উড়াউড়ি’র দৃশ্য, যে কাউকেই মোহিত করবে সহজে। পুরো বর্ষা জুড়ে তাই ঢল নামে পর্যটকদের। বাহারি নৌকায় ভেসে হাসি-গানে, নয়নাভিরাম সব দৃশ্য উপভোগ করেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। প্রকৃতির অপার লীলাভূমি, এশিয়ার সবচেয়ে বড় মিঠা পানির জলাভূমি ‘হাকালুকি’তে বর্ষায় এমন চিত্র দেখা গেলেও, শীতকালে ধারণ করে ভিন্ন সবুজাভ অপরূপ দৃশ্য। এ মৌসুমে চোখে পড়ে কেবল দিগন্তজোড়া সবুজ মাঠ। ফসলি জমি। একাধিক বিল আর ছোট ছোট নদী। নদীতে পড়ে থাকা অলস নৌকার সারি। অতিথি পাখিদের মিলনমেলা। আর বড় বড় মাছ শিকারের চিত্র। হাওরের দিগন্ত বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্য ও একাধিক বিল আর ছোট ছোট নদীগুলো সত্যি দৃষ্টিনন্দন।

সম্প্রতি সাংবাদিক বন্ধু দিলোয়ার ভাইকে সাথে নিয়ে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর দেখতে যাওয়া হয়। বিশ্বনাথ থেকে মোটরসাইকেল যোগে বিকেল ৩টায় আমরা রওয়ানা হই। পৌঁছার আগেই সন্ধ্যা গড়ায়। বড়লেখা উপজেলা সদর থেকে আমাদের সাথে যোগ দেন, স্থানীয় পরিবেশ বন্ধু সাঈব আমদ ইয়াছের। যাকে আমরা আদর করে তুহিন দাদু নামে ডাকি। দেরি না করে তখনই হাকালুকির রাতে রূপ দেখতে, সন্ধ্যা ৭টায় হাওরে পৌঁছাই। নিশুতি রাত, চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর নিশাচর প্রাণীদের ডাক, সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অদ্ভুত সময় কাটিয়ে ফিরে আসি তুহিন দাদু’র বাড়ি। রাত্রিযাপন শেষে পরদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই ফের ছুটে যাই হাওরে। যাওয়ার পথে এক পলক দেখে নেয়া হয় স্থানীয় পাখি বাড়িও।

হাওরে গিয়ে গিয়ে দেখা যায়, নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে ‘ওয়াচ টাওয়ার’। তার পাশ দিয়ে হাওরের বুক চিরে চলেছে একাধিক মেঠোপথ। এর কিছু দূর পরপর গড়ে উঠেছে গরু-মহিষের অস্থায়ী বড় বড় খামার। তাঁবু টেনে খামার করেছেন মৌসুমি খামারিরা। বর্ষার আগ পর্যন্ত ছ’মাস এখানে গরু-মহিষ পালন করেন তারা। হাওরে করা হয়েছে হেক্টরের পর হেক্টর বোরো চাষাবাদ। সবুজে চেয়ে গেছে চর্তুদিকের বিশাল এলাকা। পুরো ধান ক্ষেত জুড়ে ছিল হরেক রকম অতিথি পাখির মিলনমেলা। কিছু পাখির ঝাঁক ব্যস্ত শিকারে, কিছু পাখি সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে ডাঙায়, বাকিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ডানা মেলে উড়ছে আপন মনে। ধানি জমির পরেই হাওরের ছোট-বড় বিলের তলায় জমে থাকা অবশিষ্ট পানি ছেড়ে, বিশেষ কায়দায় মাছ শিকার করতে দেখা যায় স্থানীয় জেলেদের। তাদের জালে ধরা পড়ছে রুই, কাতলা, চিতল, মৃগেল, শোল, বোয়াল, শিং, মাগুর, বিপন্ন প্রজাতির মহাশোলসহ নানা জাতের দেশীয় মাছ। এছাড়াও মাছ শিকারের বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে রাতভর হাওরে মাছ শিকার করেন তারা। ভোরে হাওর পাড়েই চলে বিকি-কিনি। সকাল থেকে দুুপুর পর্যন্ত হাওরের বিশালতায় ডুবে রই আমরা। তার শুষ্ককালীন ভিন্নরূপ উপভোগ করে দুপুরেই ফিরে আসি আপন গন্তব্যে। 



এই পাতার আরো খবর