ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

করোনার প্রভাবেও বেঁচে আছেন পিঠা দম্পতি জালাল-মোর্শেদা
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
পিঠা দম্পতি জালাল-মোর্শেদা।

দূর থেকে দেখা যাবে আগুনের লেলিহান শিখা। লালচে বর্ন ধারণ করে পুড়াচ্ছে কয়লা। তার উপরে সেদ্ধ হচ্ছে চালের গুড়া। বাড়ি থেকে প্রক্রিয়া করে চালের গুড়া নিয়ে আসেন জালাল উদ্দিন ও তার জীবনসাথী মোর্শেদা। এরপর প্রতিদিন আপন মনে আগুনের তাপে ভাজতে থাকেন চিতই পিঠা আর ভাপা পিঠা। ধোঁয়া ওঠা পিঠা খেতে ভিড় জমান নানা বয়সী মানুষ।

পথ দিয়ে যেতে যেতে আমাদের চোখেও পড়লো এমন দৃশ্য। আগুনের দিকে তাকাতেই চোখ যেন আটকে গেল। কাছে গিয়ে দেখা গেল দুজনই একসাথে পিঠা নামাচ্ছেন আর বাড়িয়ে ধরা হাতগুলোতে তুলে দিচ্ছেন।

কথা বলে জানা গেলো চার সন্তানের এই দম্পতি পিঠা বিক্রি করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। এটিই সংসারের মূল উপার্জন। তবে করোনার প্রভাবে এই উপার্জনেও যেন বাধা। নাগড়া এলাকার একটি কোচিং সেন্টারের সামনের মোড়ে তারা দোকানটি দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। দোকান একটি ভ্যানগাড়ি। যার মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলছে সাতটি মাটির চুলা। চুলার উপরে বসানো একটি ভাপা পিঠার বড় পাতিল। বাকিগুলো চিতই পিঠার হাড়ি। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি চলে পিঠা বিক্রি।

একসময় চার থেকে পাঁচশ পিঠা বিক্রি হতো। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টাকা আয় হতো। আর এ থেকে খরচ বাদে নিজেদের জন্য হাজের খানেক টাকা থাকতো। যা দিয়ে সুন্দরভাবে চলে যেত সংসারটা। কিন্তু এর মাঝে করোনার আঘাতে বার বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আয়ও কমে গেছে।

সন্ধ্যা থেকে এখন রাত পর্যন্ত মাত্র দুই থেকে আড়াইশ পিঠা বিক্রি করা যায়। এতে খরচ বাদে তিন চারশ টাকা থাকে। যা দিয়ে চার সন্তানের মাঝে নারগিসকে পড়াচ্ছে স্কুলে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে নারগিস। সবার বড় মেয়ে বিলকিসের বিয়ে দেন সাতপাই গাড়া এলাকায়। বিলকিসের স্বামী রিকশা চালক। জুনাইদ ও মোস্তফা নামে দুই ছেলে প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের যেন সুখের সীমা থাকবে না। অল্প আয়েই এই পিঠা দম্পতির চোখে মুখে তৃপ্তির ছাপ বিরাজ করছিল।

জেলার কলমাকন্দা উপজেলার সীমান্ত পাহাড়ি নদী মহাদেও এর পাশে জালাল উদ্দিনের বাড়ি। বাড়ির পাশেই স্ত্রী মোর্শেদার নানার বাড়ি। সেখান থেকেই দুজনের কাছাকাছি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর