ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ইউটিউবে দেখা ‘বল সুন্দরী’ই বদলে দিলো নড়াইলের রাকিবের ভাগ্য!
সাজ্জাদ হোসেন,নড়াইল
কুল চাষী রাকিব

ইউটিউবে বল সুন্দরী কুল চাষের ভিডিও দেখেই রাকিব সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি উদ্যোক্তা হবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, বাবার ৬৯ শতক জমিতে ‘অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী’ কুলের গাছ লাগিয়ে দিলেন। ছয় মাস না পেরুতেই চমক পেলেন রাকিব। সবকটি গাছেই এখন তাঁর ঝুলছে থোকা থোকা বল সুন্দরি কুল। প্রতিদিন গড়ে দেড়শ থেকে দুইশ কেজি কুল বিক্রি করছেন রাকিব। দিন দিন স্থানীয় বাজারে তার কুলের চাহিদাও বাড়ছে।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের কৃষক জহর শেখের ছেলে রাকিব। ২০২১ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব এমন সাহসী পদক্ষেপ নেন। তার এই সফলতা সচক্ষে দেখতে এলাকার অনেক ছাত্র-ছাত্রী, যুবক ও কৃষকরা প্রতিদিনই কুল বাগানে ভিড় করছেন। নড়াইলে তিনিই প্রথম ‘অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী’ কুল চাষ শুরু করেন।

বাগানে বসেই এক আলাচারিতায় রাকিব জানালেন,‘ফেসবুক ও ইউটিউব দেখে উদ্যোগ নেই আমি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আর দেরি করিনি। সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৬৯ শতাংশ জমিতে ৪০০টি চারা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী কুল চাষ শুরু করি। এই অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী কুল চাষে সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু মুনাফার পরিমাণ অনেক বেশি। প্রতি কেজি কুল প্রথম দিকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করি। বর্তমানে পাইকারী ৬০-৭০ টাকা।’ 

প্রত্যেক সফলতার গল্পে যেমন কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে, রাকিবের সফল কুল বাগানেও আছে তেমন কিছু সংকট। পাখি ও চোরের হাত থেকে কুল রক্ষায় পুরো বাগান চারপাশে জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। নিয়মিত পাহারাও দিতে হচ্ছে। 

রাকিবের এমন উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার বাগান দেখে কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এলাকার অনেক বেকার যুবক। রাকিব জানান, চাকরি আশায় বসে না থেকে ছাত্রজীবন থেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার নানা ধরনের চেষ্টা করেন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন, কৃষি কাজ করবেন। তাই সামান্য পুঁজিতেই চাষবাস শুরু করেন। গত বছরের মার্চ মাস থেকে অনলাইনের মাধ্যমে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর থেকে ৪০০টি কুলের চারা সংগ্রহ করেন তিনি। ৪-৫ জন শ্রমিক নিয়ে মাত্র ৬ মাসের পরিচর্যায় সবকটি গাছেই কুল ধরেছে। 

রাকিব আশা করছেন, এ বছর তিনি পাঁচ লাখ টাকার বেশি কুল বিক্রি করতে পারবেন। কুল চাষে তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় লাভও বেশি হচ্ছে। তবে চারা সংগ্রহ করাই একটু কষ্টসাধ্য বলে জানালেন রাকিব। তিনি নিজের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে পরিবারকে সহায়তা করছেন। এছাড়াও তার কুল বাগানে কাজ করে কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁজ-সাতটি পরিবারের। রাকিব জানিয়েছেন, সরকারি সহায়তা পেলে আরও বড় পরিসরে কুল চাষ করতে চান।

রাকিবের এই উদ্যোগে পাশে থাকার কথা দিয়েছেন লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইস উদ্দিন। তিনি বলেন,‘আমরা কুল চাষী রাকিবকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করে চলেছি। ব্যতিক্রমী অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী কুল চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন রাকিব। এটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ।’ এর মাধ্যমে এলাকার তরুণ-যুবকরা তার মতো আত্মনির্ভরশীল হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।

বাগান দেখতে আসা নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) জামিল আহম্মেদ সানি বলেন,‘অল্প দিনে গাছে কুল ধরেছে বিষয়টি অবাক হওয়ার মতো। রাকিবের পরিশ্রমী উদ্যোগে সে আজ কুল চাষে সফল হয়েছে।’

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

 



এই পাতার আরো খবর