ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মতিহারের সবুজ চত্বরে বসন্তের ছোঁয়া
শোভা ছড়াচ্ছে রঙ-বেরঙের ফুল
মর্তুজা নুর, রাবি

‘দৃষ্টি দিয়ে খেলবো হোলি মাখবো না রঙ গায়ে/ ফুলের রঙে মন রাঙাবো প্রকৃতির মুখ চেয়ে। ভুবন যেন ফুলের সাজি হোলির দিনে আজ/ ফুল পাখি আর সবুজ ঘেরা নতুন রঙের সাজ।’ কবির কবিতার সঙ্গে যেন একাত্ম ঘোষণা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বাসন্তী রঙের ছোঁয়া লেগেছে ক্যাম্পাসে। মতিহার সবুজ চত্বরের প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা।

বসন্তের আগমনে আর শীতের বিদায়ের সঙ্গে প্রকৃতির জড়তা কেটে গেছে, চারদিকে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। কোকিলের কণ্ঠে কুহু রব ফিরে এসেছে। বসন্তের হাওয়া লেগে ঘুমন্ত গাছে কুঁড়ি ফুটেছে। চারদিকে চলছে সবুজ আর রঙ-বেরঙের ফুলের সমারোহ। 

দেশি বিদেশি ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো প্রাঙ্গণ। যেদিকে দুই চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। বাহারি ফুলের মনকাড়া রঙে রঙিন এখানকার শীত-বসন্তের দিনগুলো। ফুল ফোটা ভোর দিয়ে শুরু হওয়া প্রতিটি দিনই যেনো রঙধনুর রঙে সাজানো ভালোবাসায় বিভোর। পুষ্পশোভিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো সবুজ চত্বর।

দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানে যখন ব্যবসার জন্য ফুলের চাষ হচ্ছে তখন ভিন্ন চিত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধু শীত-বসন্তের সৌন্দর্যকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে ফুল। যা শিক্ষার্থীদের মনে শুধু প্রশান্তিই আনেনি, দোলা দিয়েছে হৃদয়ে।

ক্যাম্পাস ঘুরে আরও দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। সিনেট ভবনের পাশে, প্যারিস রোডের পাশে, ভিসি ভবন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলে, বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে ও ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর সুন্দর ফুলের বাগান।

ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গায় শোভা পাচ্ছে হরেক রকমের ফুল। শুধু নজরকাড়া রঙে নয়, প্রজাপতি, ভ্রমর কিংবা মানুষ’ সুগন্ধি ফুলেরা সবাইকে বিমোহিত করে দারুণ সুভাসে। রঙ আর সুভাসে এমন মন ভুলানো পসরা সাজালে প্রজাপতি কিংবা ভ্রমর তো আসবেই। বর্ণোচ্ছটা সুগন্ধির টানে ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে তারা।

শীতের মৃদু বাতাসে গাছে দোল খাচ্ছে ডালিয়া, টিথোনিয়া, ভারবেনা, প্যানজি, ডেন্টাস, পপি, স্টার, চন্দ্রমল্লিকা, সিলভিয়া, ডালিয়া, কসমস, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, ফ্লক্স, সেলোসিয়া, সুইশ ফ্লাওয়ার, বিশ্বসুন্দরী, হাড়িলাল গোলাপ, কাশ্মীরি গোলাপ, তাজমহল, ইনকা গাঁদা (কমলা, হলুদ) আরও কত শত ফুল।

এদিকে বসন্ত না আসতে না আসতেই ক্যাম্পাসের প্রকৃতিতে রক্তিম পলাশ, শিমুল নতুনত্ব এনে দিয়েছে। লাল ফুলগুলো সবুজ ঘাসের উপর পরে যেন লাল-সবুজের অভ্যর্থনা জানাতে ব্যস্ত। রাকসু ভবনের সামনে পলাশ ফুলের ঝরে পড়া পাপড়ি দেখে মনে হয় যেন এক পুষ্পশয্যা।

কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের বাগান পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা মালি মাহাবুব আলম জানান, ‘ক্যাম্পাসে এবার প্রায় ১৫-২০ প্রজাতির ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। সাধারণত আমরা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এসব ফুল গাছ লাগিয়ে থাকি। কোনো গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে আবার কোনোটিতে আসবে।’

আরেক মালি আব্দুল মামুন বলেন, ‘ঠিক যেভাবে আমরা আমাদের সন্তানকে ছোট থেকে লালন-পালন করে বড় করি, ঠিক তেমনিভাবে ফুলগাছকেও পরিচর্যা মাধ্যমে বড় করে তুলি। তারপর সেখানে ফুল ফোটে সে আনন্দ বলে প্রকাশ করার মতো না। যখন কেউ ফুলগাছ নষ্ট করে বা ফুল ছিঁড়ে ফেলে তা দেখে খুবই কষ্ট লাগে। ফুল তো গাছেই সুন্দর দেখায়। তাই সবার প্রতি অনুরোধ কেউ ফুল ছিঁড়বেন না।’

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী স্বর্ণালী আক্তার বলেন, ‘প্রতি বছরই শীতে ফুলের নানান বাহার দেখা যায় ক্যাম্পাসে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মালি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তারা সুনিপুণ হাতে ফুলের বাগানগুলো সাজিয়ে তোলে। কোথায় কোন গাছ, কোন রঙের ফুল লাগালে আকর্ষণ করবে তা তারা ভালোই জানেন। যখন মন খারাপ হয় ক্যাম্পাসে সারিসারি ফুল বাগানের দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে যায়। সারা বছরই এমন রঙিন থাকুক প্রিয় ক্যাম্পাস।’

  বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর