ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পদ্মাপাড়ে পাইলটের ‘নোঙর’
কাজী শাহেদ, রাজশাহী :
সাবেক তারকা ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট পদ্মাপাড়ে গড়ে তুলেছেন নান্দনিক রেস্তোরাঁ ‘নোঙর’

খালেদ মাসুদ পাইলট। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক সফল উইকেটরক্ষক ও ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনালে কেনিয়ার বিপক্ষে পাইলটের ব্যাট থেকে আসা ছক্কাই এনে দিয়েছিল ১৯৯৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার মর্যাদা। দেশের ক্রিকেটে এই ক্রিকেটারের অবদান অপূরণীয় হয়েই থাকবে।

পাইলট দলের খারাপ সময়ে অধিনায়কের দায়িত্বও তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। বয়সের ভারে ও তরুণদের দলে জায়গা দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন সেই ২০০৭ সালে। ব্যাট-প্যাড তুলে রাখলেও ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম এই উইকেটরক্ষক।

পাইলট ক্রিকেট ছাড়ার পর বর্তমানে কোচিং পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন। জন্মস্থান রাজশাহীতে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এক সময়ের অধিনায়ক পাইলট গত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবার তিনি রেস্তোরাঁ ব্যবসায় নাম লেখালেন। পাইলট রাজশাহী শহরে অবস্থিত তার রেস্তোরাঁটির নাম দিয়েছেন ‘নোঙর’। আপাতত পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চললেও খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে রেস্তোরাঁটি। এই রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে নিয়ে খুব আশাবাদী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক এই ক্রিকেটার।

খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে অনেকেই রেস্টুরেন্ট দিয়েছেন। আগে থেকেই গ্রেট গ্রেট প্লেয়াররা রেস্টুরেন্ট বিজনেসে আছেন। কিন্তু আমি কাউকে দেখে এই বিজনেসে আসিনি। অন্যদের মতো রেস্টুরেন্ট করতে গেলে আমি কমার্শিয়াল জায়গায় রেস্টুরেন্ট দিতাম। যেমন কমার্শিয়াল এরিয়ায় একটি বিল্ডিংয়ের মধ্যে রেস্টুরেন্ট দিতে পারতাম। যেটা একটা স্ট্রেট বিজনেস কোম্পানি হতো। তবে আমি সেটা ভাবিনি। আমি রাজশাহীতে বড় হয়েছি, বাংলাদেশের মাটিতে রাজশাহীর জন্য খেলেছি। আমি এখানকার মানুষদের জন্য কিছু করতে চাই। ব্যবসার পাশাপাশি ভালো কিছু করব ইনশাআল্লাহ্।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়- দুনিয়ার সবচেয়ে ভাল ভাল বেড়ানোর জায়গা ও ট্যুরিজম এরিয়া সমুদ্র পাড় বা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে। যা খুবই ভ্যালুয়েবল জায়গা পর্যটকদের জন্য। সেই হিসেবে আমি খুবই লাকি যে রাজশাহীর পাশ দিয়ে পদ্মা নদী গেছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেটা একদম পদ্মার পাড়েই। আর আমাদের মেয়র লিটন ভাই, তিনি কিন্তু রাজশাহীকে খুবই সুন্দর একটা নগর হিসেবে গড়ে তুলছেন। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি এবং উনাকে আমি প্রথমে একটি আইডিয়া দেই যে- আপনি অবশ্যই রাজশাহীকে এগিয়ে নিয়েছেন। যে এতো সুন্দর গ্রিন এবং ক্লিন সিটি প্রত্যেকেই প্রশংসা করে। এবং আমরা তাই রাজশাহীকে নিয়ে অহংকার করি।’ 

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক এই ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘আমরা যদি সবাই এগিয়ে আসি, প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে, নিজ নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে, তাহলে আরও ভালো কিছু করা যেতে পারে। নদীর পাড়াগুলো নিয়ে আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছিল, যে নদীর পাড়গুলো যদি আরো সুন্দর করতে পারতাম বিদেশ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ প্রত্যেকটা শহর থেকে পর্যটকরা রাজশাহীতে আসবে।’

খালেদ মাসুদ পাইলন বলেন, ‘অবসরে সুন্দর পরিবেশে একটু স্বস্তির জন্য আমার এই পরিকল্পনা। সেই জায়গা থেকে আমি নদীর পাড়ে নির্মল পরিবেশে রেস্টুরেন্টটির প্ল্যান করি।যেখান থেকে মানুষ সুন্দর কফি সার্ভিস পাবে। নদীর পাড়ে বসে ফ্রেশ ব্রিদিং সেটা তারা নিতে পারবে। সারাদিন কাজকর্ম শেষে সন্ধ্যার পর এসে নদীর পাড়ে বসবে। সেই সব চিন্তা করেই আমি মেয়রকে আইডিয়া দিয়েছিলাম। তিনি সেটা খুবই পজিটিভলি নিয়েছেন। মূলত তার সহযোগিতায় আমি এ কাজটি করছি।

পাইলট বলেন, ‘এই রেস্টুরেন্টের সঙ্গে বিশাল বড় পার্ক আছে। যেটাকে পুরোপুরি সবুজে ঘিরে ফেলতে চাই। সেখানে খেলার জায়গা থাকবে। বাচ্চারা ভার্চুয়াল জগত থেকে বের হয়ে সশরীরে এসে খেলবে। যাতে তাদের শারীরিক ইম্প্রুভ হয়। এখন দেখছেন গাছ নেই। কিন্তু দুই-তিন বছরের মধ্যে যখন প্রচুর গাছ, ফুলের গাছ হবে। তখন দেখতে অনেক সুন্দর লাগবে। মানুষ খুব সুন্দর একটা পরিচয় ইনজয় করবে।’ 

সাবেক এই অধিনায়ক আরও বলেন, ‘রাজশাহীতে বেশ কর্মসংস্থানের অভাব আছে। আমরা একটা সাইডে পড়ে গেছি। নদীর পাড়ে। হয়তো এখানে কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নেই। কিন্তু আমরা যদি এই নদীর পাড়টাকে ট্যুরিজমের আইডিয়া মাথায় রেখে ডেভেলপ করতে পারি- বিশেষভাবে স্পোর্টসের ভালো ডেভেলপ করা যেতে পারে। আমার মনে হয়, এই বৃহত্তর রাজশাহী যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ বিভিন্ন জেলায় পিকনিকে যায়। তখন তারা এই জায়গাতে আসবে। তাছাড়া যারা খুব বেশি খোলামেলা জায়গা পছন্দ করেন। ঘুরতে পছন্দ করেন- তারা অবশ্যই ‘নোঙর’-এ আসবেন। আশা করি তারা নিরাশ হবেন না।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক



এই পাতার আরো খবর