ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ি
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাতে ভাজা মুড়ি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। সদর উপজেলার ধলাই-সরুপাই এলাকার হাতে ভাজা মুড়ির সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই মুড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হতো। কিন্তু দাম না পাওয়ায় একেবারেই হারিয়ে যেতে বসেছে মজাদার মানিকগঞ্জের হাতে ভাজা মুড়ি।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। মুড়ি ভাজার কারিগররা বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে গিয়েছে। অথচ কয়েক বছর আগেও রোজার মাসে এই দুইটি গ্রাম মুড়ি ভাজার কাজে মুখরিত থাকতো রাত দিন। মুড়ি ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন (৫৫) বলেন, নিজ হাতে ধান থেকে মুড়ি প্রস্তুত করে বিক্রি করাই ছিল আমাদের পেশা। লবণ ও পানি ছাড়া এই মুড়িতে কিছুই দেওয়া হতো না। এই এলাকার শতকরা নব্বইটি পরিবার মুড়ি ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। আমার জানা মতে, বর্তমানে একটি পরিবার ছাড়া কেউ এই পেশার সাথে নেই।

তিনি আরও বলেন, বাজারে নিম্নমানের মুড়ি কমদামে বিক্রি হচ্ছে। তারপরেও আমাদের মুড়ির চাহিদা কমেনি। কিন্তু এতে লাভ হয় একবারেই কম। তাই এলাকা থেকে মুড়ি ভাজা বন্ধ হয়ে গেছে।

মুড়ি পরিবারের আরেক সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, মুড়ি তৈরির ধান মানিকগঞ্জে হয় না। মাত্র দুইজন বেপারী বরিশাল থেকে ধান এনে বিক্রি করেন। ধানের সঠিক দাম এলাকার লোকজন জানে না। তারা ধান না আনলে এলাকার লোক মুড়ি তৈরি করতে পারেন না। বাপ-দাদার পেশা ছিল মুড়ি তৈরি করে বিক্রি করা। ঝামেলার কারণে আমরা তিন ভাই বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে যাই।

মো. স্বপন মিয়া নামে এক মুড়ি ক্রেতা জানান, তিনি সব সময় মানিকগঞ্জের হাতে ভাজা মুড়ি খেতেন। কিন্তু বর্তমানে মানিকগঞ্জের মুড়ি বাজারে পাওয়া  যায় না বলে বাজারের সাধারণ মুড়ি কিনে খাচ্ছেন। এ মুড়িতে স্বাদ গন্ধ কিছুই নেই। 

শহরের খুচরা মুড়ি বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, এলাকার মুড়ির চাহিদা এখনো আছে। তবে কমদামি মুড়ি বেশি বিক্রি হয়।

ধলাই এলাকার একমাত্র মুড়ি ব্যবসায়ী তাহের আলী (৭৭) বলেন, মূলধন নাই, সঠিক সময়ে ধান পাই না। ধানের দামও বেশি। রোজা চইলা যাইতেছে, আজ ধান পাইলাম। ভিজাইতে শুকাইতে লাগবো এক সপ্তাহ তার পর বিক্রি। দীর্ঘদিনের মায়া তাই কিছু ধান বেপারীর কাছ থেকে নিয়েছি। আর মনে হয় পারুম না, এবারই শেষ। বয়স হয়েছে চালানপাতি নেই। সরকার যদি বিনা সুদে অথবা কম সুদে ঋণ দিতো তাহলে দুইশত বছরের ঐতিহ্য হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি বন্ধ হতো না।   



এই পাতার আরো খবর