ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জ
হারিয়ে যাচ্ছে বৈকালিক হাট
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

কালের বিবর্তনে মানিকগঞ্জ থেকে বৈকালিক হাট বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন কেউ সাপ্তাহিক হাটের জন্য অপেক্ষা করে না। এখন অলিতে গলিতে গড়ে উঠেছে বাজার। এসব বাজারে মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ফলসহ প্রায় সকল পণ্যই পাওয়া যায়। ভোর থেকেই এসব স্থায়ী ও অস্থায়ী বাজারের কার্যক্রম শুরু হয়। মানিকগঞ্জ শহরের দাশড়া হাট একসময় জমজমাট ছিল। আশেপাশের লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার লোকজন সাপ্তাহিক হাটে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতো। সপ্তাহে দুইদিন রবিবার ও বুধবার হাট বসতো। হাটের দিনকে কেন্দ্র করেই শহরে অধিক লোকজন জড় হতো। লোকজনের আগমনে বোঝা যেত আজ হাটবার। এখন কোনো হাটেরই জৌলুস নেই।

মানিকগঞ্জ সদরের ত্বরা বিল্টু ম্মৃতি হাট, ডাউটিয়া হাট, জয়রা গরুর হাট, মানিকগঞ্জ ছাগল হাট এখন শুধু নামেই রয়েছে। কোরবানি ঈদের সময় ছাড়া জয়রা হাটে কোনো গরু-ছাগল উঠে না। এক সময় শুক্রবার গরুর হাটের দিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব ছিল।

ত্বরা হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য হাট ধ্বংস হয়ে গেছে। এক সময় হাটে ধান, পাটসহ প্রচুর রবিশস্য উঠতো। বেপারিদের সিন্ডিকেট, পণ্যের সঠিক দাম না দেওয়া এবং ওজনে বেশি নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির কারণে কৃষকরা বাড়ি থেকে পণ্য বিক্রি করে দেয়। এছাড়া ইচ্ছে মতো তোলা উত্তোলন ও খাজনা উঠানোর কারণেও হাটে ক্রেতা বিক্রেতারা আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

কৃষক মোহাম্মদ বলেন, আমাদের মূল কাজই কৃষি। ধানের মৌসুমে ধান, পাটের সময় পাট, আখ, তরিতরকারিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য প্রতি মঙ্গল ও শনিবার ত্বরা  হাটেই আসতাম। কিন্তু হাটে কোনো নিয়ম না থাকায় এখন বাড়িতে বেপারি ডেকে এনে জিনিসপত্র বিক্রি করি। একই কারণে অন্যান্য হাটও বিলুপ্তির পথে।

জয়রার মো. আফজাল হোসেন বলেন, ত্বরা হাটে বেপারিরা জোট করে মালামাল ক্রয় করেন। প্রতি মণে এক কেজি করে পণ্য বেণি নেয়। এক মণ সরিষা চার হাজার টাকা হলে আমাদের পড়ে ৩ হাজার ৯০০ টাকা। এ ছাড়া অতিরিক্ত খাজনা, তোলা উত্তোলনসহ বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা রয়েছে। 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, হাটের দিন ছাড়া অন্যদিন মালামাল বেশি উঠে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ওই দিনগুলিতে খাজনা তোলা হয় না।

ব্যাপারীরা বলেন, ঘাটতি হিসেবে সব জায়গায় মণে এক কেজি পণ্য বেশি নেওয়া হয়।

সরেজমিনে বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায় সুনসান নিরবতা। সকালে কিছু লোকের আনাগোণা থাকলেও বিকেলে একবারেই লোক শূন্য হাট এলাকা।

সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী এলাকার গরু বেপারি  নিজাম ও সালাম বলেন, আমরা জয়রাসহ বিভিন্ন  হাটে গরু বেচাকেনা করি। হাটে অতিরিক্ত খাজনার কারণে এখন ক্রেতা-বিক্রেতারা বাড়ি থেকেই গরু বেচাকেনা করে। এতে দু’পক্ষেরই লাভ।

তবে পরিবেশবাদীরা বলেন, সাপ্তাহিক বৈকালিক হাট না থাকার কারণে যত্র তত্র বাজার বসছে। এতে নোংরা আবর্জনায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।  

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর