ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পাখির কলতানে মুখর পাহাড়
ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাখির কলতানে মুখর পাহাড়। কিচির-মিচির ছন্দের তালে ঝাঁক বেঁধে চলে সারাদিন ওড়াওড়ি। হ্রদ-পাহাড়ে পাখিদের এমন খুনসুটি দেখে মুগ্ধ স্থানীয় ও পর্যটকরা। পার্বত্যাঞ্চলে নানা প্রজাতির রঙ-বেরঙয়ের পাখি প্রায় প্রতিদিন আসছে শীত প্রধান দেশগুলো থেকে। সবুজ পাহাড়, বন-জঙ্গল আর বাঁশ ঝাড়ের অস্থায়ী নীড়ে ঠাঁই হয়েছে এসব পাখিদের। 

ভোরের আবছা কুয়াশার বুক চিরে কাপ্তাই হ্রদের ডুবো চরে বসে দেশি-বিদেশি পাখিদের মিলন মেলা। হ্রদের স্বচ্ছ জল আর হিমশীতল হাওয়ায় অতিথি পাখিদের আনন্দ মিলে সামিল হয় স্থানীয় পাখিরাও। কখনো হ্রদের বুকে ডুব সাঁতার। কখনো আবার ঝাঁক বেঁধে আকাশের নীলে ওড়াওড়ি এমন দৃশ্য দেখতে রাঙামাটিতে ভিড় জমছে পর্যটকদেরও। ঠিক সন্ধ্যা নামার মুখে পাহাড়ে বুকজুড়ে যখন ছড়িয়ে পড়ে গোধূলির সোনালি রঙ। তখনই ব্যস্ততা শুরু হয় পাখিদের। ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে যায় গহিন অরণ্যের অস্থায়ী নীড়ে।

   সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শীতের  প্রকোপ যত বাড়ছে, অতিথি পাখির আগমনও তত বাড়ছে পার্বত্যাঞ্চলে। রাঙামাটিতে দল বেঁধে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। শীতের মৌসুমি পাখি আর দেশীয় শালিক-টিয়া ও বাদুরের জন্যে রাঙামাটি শহরের ডিসি বাংলো এলাকার বৃক্ষগুলো যেন অভয়াশ্রম। বাংলোর পিছনে হ্রদের ওপর গাছগুলোতে শত শত অতিথি পাখির কলতানে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি একাকার হয়ে মিশে গেছে। প্রায় প্রতিদিন ওরা আসছে প্রকৃতির টানে দূর-দূরান্ত থেকে। পাহাড়, বন আর স্বচ্ছ জলধারা অতিথি পাখিকে বেশি আকর্ষণ করে। শীত এলেই রাঙামাটি ডিসি বাংলো এলাকার গাছগুলোতে দেখা মিলে হাজারো অতিথি পাখি। সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীত প্রধান দেশ থেকে পাহাড়ে এসেছে ফ্লাইফেচার, জলকুট, পর্চাড, জলপিপি, পাতারি, গার্নিগি, পাস্তামুখী, নর্দানপিন্টেলসহ নানা প্রজাতির পাখি। অতিথি পাখিদের সাথে যোগ দিয়েছে দেশীয় সরালি, ডাহুক, পানকৌরি, বক, বালিহাঁস সহ নানা প্রজাতির পাখি। পাখির কলকাকলিতে মুখর এই অভূতপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে ডিসি বাংলো এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমিরা।   তথ্য সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র রাঙামাটি শহর এলাকা নয়। অতিথি পাখির দেখা মিলছে জেলার সুবলং, লংগদু, কাট্টলী, মাইনিমুখ, সাজেক, বাঘাইছড়ি, হরিণা, বিলাইছড়ি ও বরকলে।  বিভিন্ন দেশ হতে আসা এসব পাখির কলরবে কানায় কানায় ভরে গেছে নদীর তীর ও জলে ভাসা চরগুলো। তাছাড়া প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার ডুব চর ও নদীর পাড়ে যেসব পাখি বেশি দেখা যায় এর মধ্যে রয়েছে-পাতিহাস, ডাহুক, কালাম, বক, ছোট সরালি, বড় সরালি, টিকি হাঁস, মাথা মোটা টিটি, চোখাচোখি, গাং চিল, গাং কবুতর, চ্যাগা ও জল মোরগ, বইধরসহ বিভিন্ন নাম না জানা অনেক পাখি। অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত পাহাড়ি অঞ্চল।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান জানান, প্রতিবছর উত্তরের শীত প্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও নেপাল থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি এদেশে আসে। এ সময় সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের উত্তরে শুরু হয় প্রচণ্ড শীত ও তুষারপাত। তাই ওখানে পাখিরা থাকতে পারে না। নিজেদের বাঁচাতে এরা ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ সংলগ্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। দেশের হাতেগোনা যে কয়েকটি এলাকায় এরা ক্ষণস্থায়ী আবাস গড়ে, তার মধ্যে অন্যতম পার্বত্যাঞ্চল। তিনি আরও বলেন, মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই রাঙামাটি ডিসি বাংলোর গাছগুলোতে তাদের আসতে দেখা যায়। আবার মার্চের  শেষদিকে আবার ফিরে যায় আপন ঠিকানায়। এরা আমাদের দেশের অতিথি। তাদের নিরাপত্তা দেওয়া সবার দায়িত্ব কর্তব্য। 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর