বাধা পেলে আরও ঘনীভূত হতে থাকে ভালোবাসার তেজ। এতে যেমন রয়েছে আবেগের ভূমিকা, তেমনি রয়েছে হরমোনসহ অনেক রাসায়নিক উপাদানের ক্রিয়া-বিক্রিয়ার গোপন চাল। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রেম-রোমান্সের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হতে থাকে কামের নেশা। এজন্য ভালোবাসার ব্যবচ্ছেদ ও রসায়ন জানা জরুরি।
অন্তর্গত রাসায়নিক পরিবর্তন আমাদের চিত্তে ঝলসে ওঠে, পাল্টে দেয় জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। নেশা ও কাম তাই একই মুদ্রার দুই পিঠ। তখন সবকিছু আর আবেগের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। রাসায়নিক উপাদানের সুতীব্র টানে খুলে যায় আদিম খোলস। এমন একটি উপাদান হচ্ছে ইস্ট্রোজেন হরমোন। এটিকে স্ত্রী হরমোন বলা হয়। আর একটি হচ্ছে টেস্টোস্টেরন বা পুরুষ হরমোন।
নারী-পুরুষের শারীরিক গড়ন নির্ভর করে এ দুটি হরমোনের আনুপাতিক হারের ওপর। শারীরিক গড়ন, কাম-তৃষ্ণা ছাড়াও রোমান্টিক আবেগ-অনুভূতির সঙ্গেও রয়েছে ইস্টোজেন এবং টেস্টোস্টেরনের গোপন খেলা। রাসায়নিক উপাদানের বিক্রিয়ার ফলে প্রেম-ভালোবাসা এবং মানবিক তীব্র আবেগীয় অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়।
মূলত দু’জন মানব-মানবী দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার কারণে একটি অদৃশ্য মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে যান। এ বাঁধনে শক্ত গিঁট এঁটে দেয় এন্ডোরফিনস নামক রাসায়নিক উপাদান এবং অক্সিটোসিন নামক হরমোন। এন্ডোরফিনস দু’জনার মাঝে শান্ত- সৌম্য নিরাপত্তার অনুভূতি জাগায়, উন্মাতাল ঢেউ জাগায় না। প্রধানত উত্তাল অনুভূতি তৈরি হয় কম বয়সী প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে। কম বয়সের প্রেম দ্রুত মিলিয়ে গেলেও নিঃশেষ হয়ে যায় না। এদের প্রেম পাত্র থেকে পাত্রে সঞ্চারিত হয়।
নতুন মুখ, নতুন চোখ, নতুন হাসি তুমুল উদ্দীপনায় আবার ব্রেনকে উদ্দীপ্ত করে, নতুন করেই সমান মাত্রায় প্রিয় পদার্থের নিঃসরণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। নতুন প্রেমের জোয়ার পূর্ণোদ্যমে আবার চলে আসে এভাবেই। পক্ষান্তরে এন্ডোরফিনসের কারণে ভালোবাসায় স্থিতি আসে বিধায় প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী নিজেদের অনেক ভুল-ত্রুটি সয়ে নিতে পারে। হুট করে এদের ভালোবাসা চলে যায় না, বরং বদলায় না।
গবেষণায় দেখা গেছে, অব্যাহত অকৃত্রিম দেহমিলনের ফলে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান দেহের ভিতর উৎপাদিত হয়। অক্সিটোসিন তখন এন্ডোরফিনসের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এন্ডোরফিনস মনকে শান্ত করে, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দূর করে। বিজ্ঞানীরা এ রাসায়নিক উপাদানকে মাদক জাতীয় নির্ভরতা বলে চিহ্নিত করেছেন। মাদকদ্রব্য যত বেশি নেওয়া হয় তত নেশা গাঢ় হয়, নির্ভরশীলতা ততই বেড়ে যায়। দেহমিলনও অনেকটা সে রকম। এ জন্যই অব্যাহত দেহমিলনকে দাম্পত্য বন্ধনের চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেক গবেষক।
দৃশ্যমান বন্ধনের মূল পর্ব দেহমিলন হলেও মূল বন্ধনকে মহিমান্বিত করে অক্সিটোসিন। এ রাসায়নিক উপাদানটিকে তাই অফুরন্ত ভালোবাসার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। মনে একজনকে ভালোবেসে ফেললাম, বিশ্ব জয় করে নিলাম। এটিই প্রাপ্তি নয়। ভালোবাসা বা প্রেমে জড়ানোটা বড় কথা নয়, টিকিয়ে রাখাটাই আসল।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ