ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফেনীর নদীগুলো, পানিশূন্য মুহুরি ও সিলোনিয়া
ফেনী প্রতিনিধি
পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে নদী

বাঁচানো যাচ্ছে না ফেনীর নদ-নদীগুলো। এতদিন ফেনীবাসী জানতো ফেনীর দাগনভূঞার একটি অংশে ছোট ফেনী নদী বিলীনের পথে। এবছর দেখা যাচ্ছে ফেনীর ফুলগাজীর মুহুরি নদী ও সিলোনিয়া নদীও রয়েছে বিলীনের পথে। ভারতের উজান থেকে পানি না আসায় ও বেশ কয়েকদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে মুহুরি ও সিলোনিয়া নদী।

মুহুরি নদীর ফুলগাজী উপজেলার দেড়পাড়া গ্রাম থেকে পরশুরাম পর্যন্ত পুরো নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে নদীর বেশ কিছু অংশ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে সিলোনিয়া নদীর ফুলগাজী উপজেলার বন্দুয়া ব্রিজ অংশের পূর্ব-পশ্চিম পাশে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ছাড়া বাকি অংশে পানি নেই। নদীর গভীরতা কমে যাওয়া এবং খনন না হওয়ার কারণে নদীর পানি ভূগর্ভে যেতে পারছে না।

ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সিলোনিয়া ও মুহুরী নদী ঘুরে দেখা গেছে, ভারতের উজান থেকে নদীতে কোনো পানি আসছে না। দুইটি নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। মুহুরি নদী অংশের ফুলগাজীর দেড়পাড়া গ্রাম থেকে পরশুরাম পর্যন্ত পানি শুকিয়ে মাটি দেখা যাচ্ছে। এতে বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষক বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে।

এদিকে সিলোনিয়া নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুই পাশে নিলক্ষী, গোসাইপুর, করইয়া, শ্রীবউরা, নোয়াপুর, কামাল্লা, রাজেশপুর, মনতলা, গাবতলা, মান্দারপুর ও পৈথারা গ্রামের হাজারো কৃষকরা বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। পানির অভাবে মাঠে ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে।

একেকটি নদীর বেশির ভাগ অংশজুড়েই পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের বাকি সময়গুলোতে এই চিত্র চোখে পড়ে। ফসল উৎপাদনে বিভিন্ন নদী ও ভূগর্ভস্থ পানির ওপরই নির্ভর করেন ফুলগাজী ও পরশুরামের বেশিরভাগ কৃষক। তবে গত কয়েক বছরে ফেনী জেলার নদ-নদী ও ভূগর্ভস্থ পানি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যয় বাড়ছে।

এছাড়া নদীতে পানি না থাকায় এই জেলার মৎস্যজীবীরাও চরম সংকটে পড়েছেন। দেশি প্রজাতির মাছের স্বাদ বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, নদীগুলো মরা খালের মতো হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি উপচে আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আর খরা মৌসুমে এসব নদীর পানি দিয়ে আগে যেসব জমি চাষ হতো, সেসব জমি এখন সেচ সংকটে পড়েছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবীরা।

ফুলগাজী উপজেলার গোসাইপুর গ্রামের কৃষক আবু আহম্মদ বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এই জায়গায় আমরা কৃষিকাজ করছি। পাঁচ বছর আগেও এই এলাকার নদী থেকে সিলোনিয়া নদীর পানি দিয়ে আমার ফসলের ক্ষেতে পানি দিতাম। এবার মাঠের কৃষি জমিগুলোর ধান শুকিয়ে গেছে।’

তিনি জানান, এ মৌসুমে দুই একর জমিতে তিনি বোরো ধান চাষ করেছেন। অর্ধেক ফসল পাবেন কি না, তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।

কৃষক মতিন জানান, নদী মরুভূমির মতো হয়ে গেছে। বর্তমানে মাটিতে গর্ত করে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে ক্ষেতে দিতে হচ্ছে। মাটির নিচ থেকেও ঠিকমতো পানি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। এতে ডিজেলের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

একই সমস্যার কথা উল্লেখ করে ফুলগাজী উপজেলার শ্রীবউরা গ্রামের কৃষক নাঈমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ফসল উৎপাদনের খরচ দিন দিন বাড়ছে।’

ফুলগাজী উপজেলার শ্রীবউরা গ্রামের মাছ চাষি আমির হোসেন বলেন, ‘বাড়ির পাশেই সিলোনিয়া নদী। কয়েক বছর আগেও এই নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু এখন আর নদীতে পানি নেই। ফলে মাছও পাওয়া যায় না। আমি এখন মাছ শিকার বাদ দিয়ে অটো চালাই। কী করব, পরিবার তো চালাইতে হবে।’ 

তার মতো আরও অনেক মৎস্যজীবী এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। নদী খননের মধ্য দিয়ে নাব্যতা বাড়ালে জলাধারের আয়তন বাড়বে। স্থানীয় কৃষকরা সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সহায়ক হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আখতার হোসেন জানান, সাধারণ মুহুরি নদীর তলা শুকিয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগে কখনো হয়নি। এটি একটি বিরল ঘটনা। বিশেষ করে ভারত থেকে পানি না আসায় মুহুরি ও সিলোনিয়া নদী পানিশূন্য হয়ে গেছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর