ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

এখনো ঘানি শিল্প আগলে রেখেছেন যে নারী
নেত্রকোনা প্রতিনিধি

এক সময়ের জনপ্রিয় তেল উৎপাদনের পদ্ধতি ছিল এই ঘানি। শুধু তেলই নয়, এ থেকে বের হওয়া খৈল গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মানুষও সরিষার তেলের স্বাদ নিতে সরাসরি ঘানিতে ভাঙাতেন তেল। কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে এই তেল তৈরির শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। শুধু মাত্র যে প্রযুক্তির ছেঁয়ায় সেটিও বলা যাবে না। নানা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রতিযেগিতার এই বাজারে ঘানি দিয়ে তেল ভাঙানো এখন একেবারের হারিয়ে গেছে। বর্তমানে গ্রামেগঞ্জেও মিলছে না এর দেখা। 

তারপরও গত কয়েক বছর আগেও নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া, কলমাকান্দা. আটপাড়া ও মদনে কিছু কিছু ঘানি ছিলো। কালের আবর্তে সেগুলোও বিলুপ্ত। জেলা ঘুরে দেখা গেছে, কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের গোগ বাজার এলাকায় ঘানিভাঙা খাঁটি সরিষার তেল এখনো পাওয়া যায়। তাও আবার চোখের সামনে দেশি সরিষা ভাঙিয়ে তৈরি করা হচ্ছে খাঁটি সরিষার তেল। উপজেলার গোগ বাজার এলাকার একটি মাত্র পরিবার আজো ঘানিভাঙা খাঁটি সরিষা তেল উৎপাদন করছেন।

সরেজমিন গোগ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঝরনা আক্তার সারা দিন ঘানি ঘুরিয়ে উৎপাদন করছেন খাঁটি সরিষার তেল। তার স্বামী সন্তানেরা গ্রামে ঘুরে সরিষা সংগ্রহ এবং এই তেল বিক্রি করে থাকেন। তিনি বলেন, প্রথমে তারা নিজেরা ঘানি ঘুরিয়ে তেল উৎপাদন করতেন। কারণ কোন পুঁজিই ছিলো না। পরে একটি গরু কিনে সেটি দিয়ে ঘানি ঘুরাতেন। কিন্তু গরু দিয়ে একাধারে ঘুরানো যায় না। এখন তারা একটি ঘোড়া দিয়ে ঘানি ঘুরাচ্ছেন। বাকি সময় ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধান চাল নেয়া আনার কাজ করেন। এটা তার স্বামীর বাপ-দাদার পেশা, অনেক কষ্টে তারা টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি গত ৩০ বছর ধরে এ পেশার সাথে যুক্ত আছেন।

প্রতিটি ঘানিকে ‘গাছ’ বলা হয়। গাছে একটি বিশেষ আকৃতির ছিদ্রের ভেতর দিয়ে তেল পড়ে এবং তা একটি ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়। দুই ঘণ্টা সময়ে একবারে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে সারা দিনে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি সরিষা ভাঙতে পারেন।    প্রতি পাঁচ কেজিতে দেড় থেকে পৌনে দুই লিটার তেল পাওয়া যায়। যা চারশ' থেকে সাড়ে চারশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। যা দিয়ে ঘোড়ার খাবার খরচসহ নিজের খরচ চালাতে হয়। তবে সরকারি বেসরকারি কোন সহযোগিতা পেলে এটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবেন বলে জানান তারা। 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর