ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পরকীয়া পাখি জলময়ুরী
নজরুল মৃধা, রংপুর

মানুষের মধ্যে নারী পুরুষের পরকীয়ার ঘটনা সচারচর আমরা শুনতে পাই। জীবজগতেও যে পরকীয়া রয়েছে এটা আমাদের অনেকেরই অজানা। জীবজগতের তেমনি একটি পাখি রয়েছে যার নাম জলময়ূরী। একাধিক পুরুষ পাখির সাথে পরকীয়া করেও এই পাখিটি দিব্যি বংশ বিস্তার করে চলছে।  দুলর্ভ প্রজাতির হলেও আমাদের দেশে বিল ও নিম্নাঞ্চলে এই পাখিটি মাঝে মধ্যে দেখা মিলে। সম্প্রতি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা থেকে জলময়ুরীর ছবি তুলেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি নদী, ফুল, পাখি, গাছ ইত্যাদির ছবি তুলে বেশ নাম করেছেন।

তিনি বলেন,আবাসস্থল কমে যাওয়ায় জলময়ুরীর সংখ্যা কমে গেছে।  তবে এখনও বিল হাওরে এই পাখির দেখা মিলে। এই পাখির বৈশিষ্ট হল স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ার পরে ডিমে তা দেয় পুরুষ পাখি। পুরুষ পাখি ডিমে তা দেয়াকালিন সময় একাধিক পুরুষ পাখির সাথে মিলিত হয় স্ত্রী জলময়ুরী। বাচ্চা জন্মের পর দেখাশোনা করে পুরুষ পাখি। 

জলময়ুর সম্পর্কে জানা গেছে, অনেকে এই পাখিকে নেউ, নেউপিপি, পদ্মপিপি, মেওয়া ইত্যাদি নামেও ডেকে থাকেন। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাখি। লম্বালেজী সুন্দর পাখিটি বাংলাদেশের অনেকটা দুর্লভ। প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা লেজসহ পাখির দেহের দৈর্ঘ্য ৩৯ থেকে ৫৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পুরুষ পাখি ১১৩ থেকে ১৩৫ গ্রাম হয়ে থাকে। স্ত্রী প্রজাতির পাখির ওজন একটু বেশি। স্ত্রী প্রজাতি সাধারণত ২০৫ থেকে ২৬০ গ্রাম হয়।  গ্রীষ্মকালে একাকী বা জোড়ায়  ঘুরে বেড়ায়। শীতকালে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে থাকে। ভাসমান পাতার ওপর হেঁটে হেঁটে জলজ উদ্ভিদে থাকা পোকা-মাকড় এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণী, জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা, অঙ্কুর ও বীজ খেয়ে এরা জীবন ধারন করে।  প্রজননকালে জলময়ুূর অত্যন্ত সুন্দর হয়ে ওঠে। প্রজননকারী পাখির মাথা, গলা ও ডানার পালক সাদা থাকে। ঘাড় সোনালি-হলুদ, পিঠ গাঢ় বাদামি, বুক-পেট কালচে-বাদামি ও লেজ কালচে হয়। চোখ বাদামি ও পা নীলাভ-কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রজননকালে পুরুষ শাপলা ও পদ্মপাতা জাতীয় ভাসমান কোনো উদ্ভিদের পাতার ওপর বাসা বানায়। সেখানেই ডিমে তা দেয়। স্ত্রী পাখিটি ডিম পেড়ে চলে যায় অন্য পুরুষ পাখির কাছে। পুরুষ একাই ডিমে ২৩ থেকে ২৬ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। ডিম থেকে ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটতে, সাঁতরাতে ও ডুব দিতে পারে বাচ্চারা। প্রায় দুই মাস পর্যন্ত বাবার তত্ত্বাবধায়নে থাকে পাখির বাচ্চা।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর