ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সারা বছরই নতুন পাতা গজায় নাগেশ্বরে
নজরুল মৃধা, রংপুর
ফাইল ছবি

সারা বছরই নতুন পাতা গজায় নাগেশ্বর গাছে। অন্যান্য উদ্ভিদের নির্দিষ্ট একটি সময়ে পাতা গজালেও নাগেশ্বর কিছুটা ব্যতিক্রম। সারা বছরই এই গাছে তাজাপাতা পাওয়া যায়। নাগেশ্বর শ্রীলঙ্কার জাতীয় ফুল হলেও এক সময় আমাদের দেশে প্রচুর পাওয়া যেত। ধীরে ধীরে এই গাছটি দুর্লভের তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। 

সম্প্রতি এই গাছের ফলের দেখা মিলেছে রংপুরের পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়ার স্মৃতিকেন্দ্রে। এই গাছের ফুল থেকে সুগন্ধি আতর তৈরি করা যায়। এই গাছ সম্পর্কে জানা গেছে, নাগেশ্বর কিংবা নাগেশ্বর চাঁপা বাংলাদেশে পথতরু হিসেবে এক সময় প্রচুর চোখে পড়ত। এখন আগের মতো নাগেশ্বর চোখে পড়ে না। এই গাছের উচ্চতা ২৫-৩০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। গাছের গুঁড়ির পরিধি প্রায় ২ মিটার হতে পারে। ডাল বেশ নরম, বাকল ৫ ইঞ্চি পুরু এবং লালচে। লোহাকাঠ গাছ নামেও পরিচিত। 

কাণ্ড থেকে আঠা পাওয়া যায়। কাঠ বেশ শক্ত হয়। কাঠের রং লাল। ধীর গতিতে বড় হয়। পাতা ও ফুল উভয়ই সুন্দর। ফুলে রয়েছে মিষ্টি সুগন্ধ। এটি এক প্রকার শোভাবর্ধক, চিরসবুজ গাছ। পাপড়ির রং দুধ-সাদা ও একটু কোকরানো। নাগেশ্বর ফুলের পুংকেশরগুলো সোনালি, যা ফুলের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সব মিলিয়ে এই ফুল বর্ণে-গন্ধে অনন্য। 

নাগেশ্বর ফুল সবচেয়ে বেশি ফোটে বসন্তকালে। তবে বর্ষার পরও কমবেশি ফুল চোখে পড়ে। ফুলে সুগন্ধ আছে। ফুল ফুটলে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বহুদূর। এর ফলের রং প্রথমে তামাটে, পরে ধীরে ধীরে বাদামি রং ধারণ করে। পাতাগুলো সরু ও বলমাকৃতির। সারা বছর নতুন নতুন পাতা গজানো এই গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 

মার্চ মাসে গাছে যখন নতুন কচিপাতা জন্মায় তখন সকাল বা বিকালে রোদ পড়লে আগুনের শিখার মতো দেখায়। পাতা ঝরায় না বলে গাছটি বেশ ছায়া সুনিবিড়। কচিপাতার রংমাখা উচ্ছ্বাস, শুভ্রপুষ্পর স্নিগ্ধ শোভা বর্ধন করে। গৃহসজ্জা ও পূজার উপকরণে এ ফুল কাজে লাগে। বীজতেল বাতের মালিশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

নাগকেশরের ফুল ভেষজগুণেও অনন্য। প্রকৃতি বিষয়ক লেখক কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না জানান, গাছটি দেখতে পিরামিড আকৃতির। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে লোকগীতিতে নাগকেশর ফুলের উপমা সত্যিই অপূর্ব : ‘নাচেন ভালা সুন্দরী লো বাঁধেন ভালা চুল যেন হেলিয়া দুলিয়া পড়ে নাগেশ্বরের ফুল’। পথতরু হিসেবে নাগেশ্বর গাছটি দৃষ্টিনন্দন, তাই আরও বেশি করে রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর