ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

অধীর, প্রতিমা তৈরিকেই যিনি করেছেন ধ্যান-জ্ঞান
সাইফুল ইসলাম বেগ, বিশ্বনাথ (সিলেট)

বছর জুড়ে মাটি, খড়, কাঠ, বাঁশের কঞ্চি আর রঙ-তুলিতেই মগ্ন থাকেন তিনি। ধাপে ধাপে গড়েন নিত্য নতুন প্রতিমা। তার সুনিপুণ হাতের জাদুতে তৈরি হয় ভক্তদের হৃদয় ছোঁয়া প্রতিমা। অপূর্ব নির্মাণ শৈলী আর হাতের ছোঁয়ায় সৃষ্টিকর্মগুলো হয়ে ওঠে জীবন্ত। বাহারি ডিজাইনের প্রতিমা আকৃষ্ট করে ছোট-বড় সবাইকে।

কৈশোরে মৃৎশিল্পী বাবার সহযোগী হিসেবে শিল্পসৃষ্টির পথে নামেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার একমাত্র প্রতিমা কারিগর অধীর আচার্য্য সাগর (৪২)। তিনি উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের কালিজুরি গ্রামের মৃত সুখময় আচার্য্য’র ছেলে। বাবা মারা যাবার পর বড় ভাইয়ের কাছ থেকেও নেন মৃৎশিল্পের দীক্ষা। 

২০০৪ সালে ২৩ বছর বয়স থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিমা বানাতে শুরু করেন তিনি। এরপর থেকেই নিরন্তর চলছে তার শিল্প সাধনা। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক প্রতিমা তৈরি করেছেন তিনি। বর্তমানে বালু-সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে স্থায়ী প্রতিমাও তৈরি করছেন এ শিল্পী। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন মন্দিরে মন্দিরে শোভা পাচ্ছে তারই হাতে গড়া অসংখ্য প্রতিমা। তার সৃষ্ট প্রতিমার মধ্যে রয়েছে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, মহিষ, পেঁচা, হাঁস, সর্পসহ বিভিন্ন প্রতিমা। সমাগত দুর্গা পূজায় বিভিন্ন মণ্ডপে মণ্ডপে স্থান করে নিয়েছে তার তৈরি প্রতিমা। শুধু উপজেলায় নয় সিলেট জেলা, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় গিয়েও প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তিনি।

কথা হলে প্রতিমা কারিগর অধীর আচার্য্য সাগর জানান, তার পিতা ছিলেন পেশায় মৃৎশিল্পী। ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে বিভিন্ন মণ্ডপে ও বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শিখেন। বাবা মারা যাবার পর বড় ভাই শুধাংশুর কাছ থেকেও আয়ত্ত করেন মৃৎশিল্পের আদি-অন্ত। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর পড়ালোখায় মন বসাতে পারেননি তিনি। রক্তের সঙ্গে মিশে যায় প্রতিমা তৈরির কাজ। ২৩ বছর বয়স থেকে শুরু করেন পূর্ণাঙ্গ প্রতিমা তৈরি। এরপর থেকে প্রতিমার কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। তিনিই এখন উপজেলায় একমাত্র প্রতিমা তৈরির কারিগর।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ খুবই কষ্টসাধ্য। কম-বেশি সারা বছর কাজ থাকলেও পারিশ্রমিক অপ্রতুল। কোন মতে সংসার চলে। তাই এ কাজ কেউ শিখতে চায় না। পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্যের এ পেশাটি কোন মতে আঁকড়ে ধরে আছি। আমার পরবর্তী প্রজন্মের কেউই এতে আগ্রহী নয়।

এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দাশ বলেন, আচার্য্য সম্প্রদায় বংশানুক্রমে মূতি তৈরি করে থাকেন। অধীর আচার্য্য উপজেলার একমাত্র মূর্তি তৈরির কারিগর। তার বাবাও একজন প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী ছিলেন। আমরা বিভিন্ন সময় তাদের বাড়ি থেকে মূর্তি এনে পূজা অর্চনা করে থাকি। বর্তমানে এ পেশা বিলুপ্তির পথে। যা আমাদের জন্যে শুভ নয়।

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর