ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শীতের আগমনী বার্তায় বগুড়ায় লেপ-তোষকের দোকানে ব্যস্থতা
আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের পর বগুড়ার আকাশে কুয়াশার দেখা মিলেছে। সকালের মাঠে মাঠে, ধানের ডগায়, ঘাসে জমে থাকছে শিশির। উত্তরে হাওয়া বলে দিচ্ছে আসছে শীত। প্রকৃতির পালাবদলে হেমন্তের সাথে শীতের আগমনী বার্তা পেয়ে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে অনুভূত হচ্ছে শীত শীত ভাব। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বাড়তেই বগুড়ার গ্রামাঞ্চলে হালকা কুয়াশা পড়ছে। দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে আবহাওয়া। শীতের আগমনী বার্তায় লেপ-তোষক তৈরীতে ব্যস্ততা বেড়েছে।

জানা যায়, বগুড়ায় দিনে চলছে কোথাও রোদ আবার কোথাও মেঘের লুকোচুরি খেলা। শেষ রাতে শীতে গা শির শির করে উঠছে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারদিকে। সবুজ ঘাস ও গাছের পাতায় জমছে শিশির কণা। গাছে গাছে ফুটতে শুরু করেছে শিউলিসহ নানা ফুল। জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে বেড়ে উঠেছে সবুজ ধান। কুয়াশার আঁচল সরিয়ে ভোরে ওঠে কোমল রোদের কিরণ ছটা। দিনগুলো ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। দ্রুত তলিয়ে যাওয়ার তাড়ায় ভোগে সূর্য। বিকেলের আলো দেখতে দেখতেই মিলিয়ে যায় দিগন্তে। শিশিরের শব্দের মতো সন্ধ্যা নামে। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে সারাদিন সূর্যের তাপ থাকলেও সন্ধ্যার পর ঠান্ডা আর সকালের মাঝারি কুয়াশা সৃষ্টি করেছে জেলায় শীতের আমেজ। শেষ রাতে গায়ে দিতে হচ্ছে কাঁথা। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে এ জেলায় শীতের আগমন ঘটলেও এবার কার্তিক মাসের মাঝামাঝিতেই শুরু হয়েছে শীত। শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে উঠছে প্রকৃতি, শরীরের ত্বকে টান পড়ছে। দিনের চেয়ে রাতের তাপমাত্রা কমছে উল্লেখযোগ্য হারে। 

বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় শীতের অনুভূতি হলেও পুরোপুরি আমেজ শুরু হবে নভেম্বরের শেষের দিকে। সকালের শিশির আর সন্ধ্যায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে বগুড়া শহর এবং উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামও। ফলে শহর ও গ্রামবাসী নিচ্ছেন শীত মোকাবিলার প্রস্তুতি। এতে ভিড় বাড়ছে লেপ-তোষকের দোকানে। যে কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোশকের কারিগর ও এই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরও।

শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে বগুড়ার শহর ও উপজেলাগুলোতে লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী কারিগরদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে। লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা ও ব্যবসায়ীরা। বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায় এসব শীত বস্ত্রের।

লেপ-তোষক তৈরির কারিগররা জানান, কাপড় ও তুলার দাম বেশি হওয়ায় খরচ আগের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এটি একটি মৌসুমী ব্যবসা। সারা বছর অলস সময় কাটানোর পর শীতের কয়েক মাস কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধির সাথে সাথে দিন রাত পরিশ্রম করে অতিরিক্ত উপার্জন নিজেদের স্বচ্ছলতা ফেরানোর চেষ্টা করেন। শীতের প্রকট যত বেশি হয়, কাজও ততো বেশি বেড়ে যায়।

বর্তমানে একটি লেপ বানাতে খরচ নেয়া হচ্ছে ১২শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে তুলা আর কাপড়ের গুণগত মানের উপর ভিত্তি করে লেপ তোষকের দাম নির্ধারণ করেন তারা।

বগুড়ার শহরের ২নং রেলঘুমটি, কলোনী, খান্দারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি লেপ ও তোষক তৈরিতে ৫-৬ কেজি তুলা ব্যবহার করা হয়। এসব লেপ আকারভেদে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া একটি তোষক তৈরি করতে ৮-১৫ কেজি তুলা লাগে। বিক্রি হয় ১ হাজার দু’শ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। একটি জাজিম তৈরিতে ৩০-৫০ কেজি তুলা ও নারিকেলের খোসা প্রয়োজন হয়। আকার ভেদে তা বিক্রি হয় সাড়ে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়।

বগুড়ার জেলার ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের অন্যান্য সময় মাসে ২-৪ জন তোষক কিনতে আসলেও লেপের চাহিদা একেবারেই থাকে না। শীতের শুরু থেকে অন্তত ৪টি মাস লেপ-তোষক বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এ সময় সবচেয়ে বেশি লেপ বিক্রি হয়ে থাকে। যে কারণে চাহিদার কথা মাথায় রেখে লেপ সেলাই কর্মীদের সংখ্যাও বাড়াতে হয়।

বগুড়া শহরের কলোনী এলাকার কারিগর মো. ফারুক জানান, তিনি ২২ বছর ধরে এই পেশার সাথে জড়িত। শীতের সময় কাজের চাপ একটু বেশি থাকে। এ সময় গড়ে প্রতিদিন একজন কারিগর ৩-৪টি লেপ-তোষক তৈরি করতে পারেন। এছাড়া গত শীতের তুলনায় বিভিন্ন প্রকার তুলা ও কাপড়ের দাম বেড়েছে। যে কারণে প্রতিটি লেপ-তোষকে আকার ভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা বেশি খরচ পড়ছে। 

তিনি আরও জানান, একটি লেপ সেলাই করলে মজুরি পান ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর তোষক সেলাই করলে পান ৫০০টাকা। তিনি গড়ে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা উপার্জন করেন। 

ওই এলাকার ব্যবাসীয় বেস্ট ওয়ান বের্ডিং এন্ড স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. নাছির উদ্দিন জানান, কাপড় ও তুলার দাম বেশি হওয়ায় খরচ আগের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া এটি একটি মৌসুমী ব্যবসা। বর্তমানে শ্রমিক সংকটের কারণে অনেক ক্রেতাদের বাধ্য হয়ে ফিরে দিতে হয়। শ্রমিক মজুরিও বেড়ে গেছে। এবছর তুলার দামও বেড়ে গেছে। ইন্দোনেশিয়া তুলা ৩৫০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। যা গত বছর ছিল ৩০০ টাকা। এছাড়াও দেশী শিমুল তুলা বিচি ছাড়া ৬০০ টাকা ও বিচিসহ ৩২০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। তবে অন্যান্য তুলার চেয়ে বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ইন্দোনেশিয়া তুলার। তিনি জানান, ৪-৫ হাত একটি লেপ তৈরি করতে খরচ হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা।  

লেপ তৈরি করতে আসা শহরের বেজোড়া এলাকার হোসেন আলী জানান, শীত আসছে তাই আগে থেকেই লেপ তৈরি করার প্রস্তুতি নিয়েছি। পরিবারের শীত নিবারণের জন্য লেপ তৈরি করেতে এসেছি। গত বছরের চেয়ে এবছর সবকিছুর দাম বেশি। যে কারণে আগের চেয়ে দাম একটু বেশি। ৪ থেকে ৫ হাত একটি লেপ তৈরিতে খরপ খরচ পড়েছে ১ হাজার ৮০০টাকা। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর