ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বিপন্ন ছাতিম গাছ, হারিয়ে যেতে বসেছে ফুলের তীব্র মিষ্টি গন্ধ
নজরুল মৃধা, রংপুর

এক সময় হেমন্তের সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ছাতিম গাছের গুচ্ছবদ্ধ সবুজাভ সাদা ফুলের তীব্র মিষ্টি গন্ধ মানুষকে মোহিত করতো। জলবায়ুর পরিবর্তনসহ নানা কারণে ছাতিম গাছ এখন বিপন্ন প্রজাতির খাতায় নাম লেখাতে বসেছে। প্রকৃতি প্রেমিরা ছাতিম গাছ রক্ষায় গবেষণার দাবি করেছেন।

  ছাতিম গাছ সম্পর্কে জানা গেছে, ছাতিমের আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হলেও এক সময় এই গাছটি গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে এবং রাস্তার ধারে অহরহ দেখা যেত। আর্দ্র কর্দমাক্ত, জলসিক্ত স্থানে ছাতিম বেশি জন্মে। ছাতিম গাছ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে এই গাছটির অস্থিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে। 

ছাতিম গাছ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বহু ডাল বিশিষ্ট গাছটির ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধূসর। ছাতিম পাতার উপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধূসর থাকে। এর শাখা পত্রমূলাবর্ত বিশিষ্ট। ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা পাতা একই মূলাবর্তে ৪ থেকে ৭ টা পর্যন্ত থাকে। ডালের শীর্ষে সবুজ মেশানো সাদা রংয়ের থোকায় থোকায় ক্ষুদ্রাকৃতি ফুল ফোঁটে। এই ফুলে রয়েছে তীব্র মিষ্টি গন্ধ। ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা সরু ফল এক বৃত্তে সাধারণত দুটো ক’রে ঝুলে থাকে। ছাতিমের বীজ লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারায় আঁশ থাকে আর শেষ প্রান্তে এক গোছা চুল থাকে। ছাতিম গাছের অভ্যন্তরে দুধের মতন সাদা এবং অত্যন্ত তেতো কষ প্রচুর পরিমাণে থাকে। 

ছাতিমের কষ অনেকে ওষুধরূপে ঘা বা ক্ষতে লাগিয়ে থাকেন। ছাতিম গাছের বাকল বা ছাল শুকিয়ে নিয়ে  ওষুধি হিসেবে ব্যবহার হয়। ছাতিম গাছের কাঠ পেন্সিল তৈরির জন্য উপযুক্ত। ছাতিমের কাঠ দিয়ে খুব সাধারণ মানের আসবাবপত্র, প্যাকিং কেস, চায়ের পেটি, পেনসিল এবং দেশলাইয়ের কাঠি তৈরী হয়। তবে বাজারে ছাতিম গাছের কাঠের চাহিদা না থাকায় এই গাছটি রোপণে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কম। 

প্রকৃতি ও ইতিহাস বিষয়ক লেখক ও  সৌখিন আলোকচিত্রী রানা মাসুদ বলেন, গাছটি পরিধি বিস্তৃত করে বেড়ে উঠে। গাছটির বেড়ে উঠার মত পরিধি দিন দিন কমে যাওয়ার কারণে এই গাছটি এখন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় স্থান করে নিতে বসেছে। তিনি এই গাছটি বিলুপ্তি রোধে গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করছেন।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর