ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শীতের আগমনে সরগরম কাজিপুরের কম্বলপল্লী
প্রতিদিন বেচা-কেনা কোটি টাকার উপরে
আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ :

শীতের আগমনে সরগরম হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কম্বলপল্লী। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ শ্রমিকরা কম্বল তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শ্রমিকরা বলছেন, সংসারের পাশাপাশি সেলাই মেশিন দিয়ে কম্বল তৈরী করে তারা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দামে কম আর মানে ভালো হওয়ায় কাজিপুরের কম্বলের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। আর সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কম্বল শিল্পের ব্যাপক ব্যবসার প্রসার ঘটবে বলে মনে করছেন কম্বল ব্যবসায়ীরা। 

জানা যায়, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার শিমুলদাইড়, বরশীভাঙ্গা, সাতকুয়া, শ্যামপুর, ছালাভরা, কুনকুনিয়া, পাইকরতলী, ঢেকুরিয়া, বরইতলা, মসলিমপাড়া, মানিকপটল, গাড়াবেড়, রশিকপুর, হরিনাথপুর, ভবানীপুর, মাথাইলচাপর, রৌহাবাড়ী, পলাশপুর, বিলচতল, চকপাড়া, লক্ষীপুর, বেলতৈল, চকপাড়া, চালিতাডাঙ্গা, কবিহার,  হাটশিরা, মাইজবাড়ী ইউনিয়নের মাইজবাড়ী, পলাশবাড়ী, চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের শিমুলদাইড়, চালিতাডাঙ্গা, বরশীভাঙ্গা, মাধবডাঙ্গা, হরিনাথপুর, বেলতৈল ও গান্ধাইলসহ আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামে গড়ে উঠেছে কম্বল তৈরির কারখানা। সেলাই মেশিনে ছোট ছোট ঝুট কাপড় জোড়া দিয়ে এবং বড় বড় থান কাপড় কেটে বাহারী ডিজাইনের কম্বল তৈরি করেন শ্রমিকরা। কম দামে ভালো মানের কম্বল হওয়ায় এখনকার কম্বলের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতি বছরই পরিধি বাড়ছে কম্বল শিল্পের। কম্বল শিল্পকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার বেকার যুবক, নারী ও শিক্ষার্থীর। এখানে বাংলা, বিশ্বাস ও চায়নাসহ ১৬৬ রকমের কম্বল তৈরী করা হয়। 

কাজিপুরে ৯০ টাকা থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা মূল্যের কম্বল তৈরী হয়। এখানকার কম্বল ঢাকা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিদিন বাজারের ৫০ থেকে ৬০টি দোকানে প্রায় কোটি টাকার কম্বল বেচাকেনা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে পাইকার কম আসায় এ বছর ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

কম্বল তৈরীর সাথে জড়িত কারিগর নারী শ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুন ও খাদিজা খাতুন জানান, মহাজনরা ছোট ছোট ঝুট কাপড় আমাদের বাড়িতে দিয়ে যায়। আমরা সেলাই মেশিনের মাধ্যমে জোড়া লাগিয়ে বিভিন্ন মাপের কম্বল তৈরী করে থাকি। সংসারের পাশাপাশি কম্বল তৈরীর কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ নানা কাজে লাগাতে পারছি। এতে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসছে।

কারিগর আব্দুল আলিম, আল-আমিন ও আনোয়ার হোসেন জানান, মহাজনরা বড় বড় থান কাপড়ের গাট্টি কিনে নিয়ে আসে। সেগুলো থেকে বিভিন্ন সাইজে কেটে সেলাই মেশিনের সাহায্য বাহারি ডিজাইনের কম্বল তৈরী করা হয়। বিভিন্ন কলেজের ছাত্ররাও পার্টটাইম কম্বল সেলাই করে নিজেদের খরচের টাকা জোগান দিতে পারছেন।

ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ও আব্দুল হান্নান জানান, ঢাকা ও গাজিপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানার ঝুট কাপড় স্বল্পদামে কিনে এনে বিভিন্ন বাড়িতে নারীদের দিয়ে সেলাই মেশিন দিয়ে জোড়া লাগিয়ে কম্বল তৈরী করা হয়। এছাড়াও চিটাংগাং থেকে বড় বড় থান কাপড়ে গাট্টি কিনে এনে ছোট ছোট করে কেটে বাহারী ডিজাইনের কম্বল তৈরী করা হয়। কাজিপুরের সর্বনিম্ন ৯০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের কম্বল তৈরী করা হয়। প্রতিদিন কোটি টাকার কম্বল বিক্রি হয়। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা এখান থেকে কম্বল কিনে নিয়ে ট্রাকযোগে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচি অবরোধের কারণে এবার বেচাকেনা কম হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।  

ব্যবসায়ী হালিমুর রহমান জানান, প্রায় ৪শত জন ব্যবসায়ী, ৩৬ থেকে ৪০ হাজার মানুষ, বিশেষ করে নারীরা এই কাজের সাথে যুক্ত।  স্থানীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখা এই শিল্পটির প্রসারে বিভিন্ন পরিকল্পনার পাশাপাশি টাকা লেনদেনের জন্য ব্যাংক স্থাপনসহ সরকারীভাবে পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণ দিলে ব্যবসার আরো প্রসার ঘটত।  

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুখময় সরকার জানান, কাজিপুরের কম্বলের খ্যাতি দেশজুড়ে রয়েছে। কম্বল শিল্পের মাধ্যমে নদীভাঙ্গন কবলিত কাজিপুরের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। কম্বল ব্যবসা প্রসারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে কম্বল ব্যবসায়ী ও পাইকারদের সুবিধার্থে ব্যাংক স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর