ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কেঁচো সারে সচ্ছল নারীর গ্রাম বড় আলমপুর
মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

বড় আলমপুর। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার একটি গ্রাম। উঠানে উঠানে সিমেন্টের রিং। রিং ভর্তি গোবর। তাতে কেঁচো দিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে সার। এই সার বিক্রি করে নারীরা মাসে আয় করছেন ১৫-২০ হাজার টাকা। গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়ির নারীরা এই সার উৎপাদনের মাধ্যমে আয় করছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ৬ বছর আগে বাংলাদেশ একাডেমিক ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট (বার্ড) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নারীরা কেঁচো সার তৈরি করছেন। পরবর্তীতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই জৈব সার উৎপাদনকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে বড় আলমপুরে ২৭০ জন নারী এই সার উৎপাদন করছেন। তাদের দেখাদেখি পাশের ছোট আলমপুর, কৃষ্ণপুর, বিষ্ণপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে এই সার তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে সাড়ে ৩ শতাধিক নারী পুরুষ এই সার উৎপাদন করছেন। প্রতি কেজি সার ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।

বড় আলমপুর গ্রাম ও পাশের গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নারীরা বাড়ির সামনে ও ঘরের পেছনে রাখা রিংয়ে গোবর দিচ্ছেন। কেউ পুরাতন গোবরে কেঁচো দিচ্ছেন। কেউ নির্দিষ্ট সময় শেষে সার বের করে আনছেন। রিং তো নয় যেন টাকা তৈরির মেশিন। পাশের গ্রাম থেকে কৃষকরা এসে নগদ টাকায় সার কিনে নিচ্ছেন। কাজের কারণে শীতেও হালকা ঘামছেন কেউ কেউ। তবে সার বিক্রির নগদ টাকা শাড়ির আঁচলে গিট দিতে দিতে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে।

বড় আলমপুর গ্রামের রানু বেগম, আয়েশা আক্তার ও জাহানারা বেগম জানান, পরিবারের কাজের অবসরে তারা এই সার তৈরি ও বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। কেঁচো থেকে তৈরি হয় বলে প্রথমে অনেকেই নাক সিটকাতো। এখন সবাই এই সার তৈরি ও বিক্রি করছেন। এই সার উৎপাদনে তাদের আয় বেড়েছে। লাভ দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসছে।

বড় আলমপুরের কৃষক হারুন মিয়া বলেন, তিনি কেঁচো সার নিয়মিত ব্যবহার করেন। কেঁচো সার ব্যবহারে গাছের ফলন বৃদ্ধি পায়।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসাম্মদ আমেনা খাতুন বলেন, তার ব্লকে ১০ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয়। যার মধ্যে ৭ হেক্টর জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করেন কৃষকরা। 

তিনি আরও বলেন, নারীরা এই সার নিজেরা বাগানে প্রয়োগ করেন। বাকিটা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। তিনি তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

বার্ডের যুগ্ম পরিচালক ও প্রকল্প প্ররিচালক আনোয়ার হোসেন ভুইয়া বলেন, আদর্শ সদর উপজেলার বড় আলমপুর, বুড়িচংসহ বিভিন্ন উপজেলায় আমরা জৈব সার উৎপাদনের মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করার বিষয়ে কাজ করছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারে মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। কুমিল্লার চান্দিনা, বুড়িচং, দেবিদ্বারসহ বিভিন্ন উপজেলায় আমরা কৃষকদের কেঁচো সার উৎপাদনে সহযোগিতা করছি।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর