ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জৌলুস হারিয়েছে রংপুরের বেনারসি পল্লী
নজরুল মৃধা, রংপুর

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বেনারসি পল্লী জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। আগের মতো নেই তাঁতের খুটখাট শব্দ। নেই হাঁক-ডাক। হাতে গোনা কয়েকজন এই ব্যবসাটিকে কোনো রকমে ধরে রয়েছেন। তবে এই বেনারসি পল্লীকে ঘিরে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় তারাই ধরে রেখেছেন বেনারসির ঐতিহ্য। 

গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের তালুক হাবু গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, হাতে গোনা ৮/১০ এই ব্যবসাটিকে কোনো রকমে আগলে রেখেছেন। এক দশক আগে হাবু তালুক গ্রাম বেনারসি তাঁতের খুটখাট শব্দে মুখর থাকলেও এখন অনেকটা নিরব ওই গ্রাম। তবে বেনরসিকে ঘিরে গজঘন্টা ও বুড়ির হাট এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাদের আশা সামনে ঈদ উপলক্ষে এই ব্যবসা ভালো হতে পারে। 

স্থানীয়রা জানান, আনুমানিক ২০০০ সালের দিকে প্রায় ১২০/১৩০টি তাঁত দিয়ে ওই এলাকায় বেনারসি পল্লী গড়ে তোলা হয়। তালুক হাবু গ্রামসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে এই তাঁত শিল্পের বিস্তৃতি ঘটে। পাঁচশ’ বেশি তাঁতে ৩ থেকে ৪ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করত। এক দশক আগেও হাবু গ্রামের প্রায় সবাই বেনারসির সাথে যুক্ত ছিল। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও কারিগর-শ্রমিকের পদচারণায় মুখর ছিল বেনারসি পল্লী। কিন্তু শ্রমিক সংকট, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, স্থানীয় ভাবে সুতা না পাওয়া, ডাইং মেশিন না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যায় এই শিল্পটি হোঁচট খেতে থাকে। ফলে অনেক তাঁত শিল্পী ঝড়ে পড়েছেন। এখানকার উৎপাদিত শাড়ির ধরন বা নকশার ওপর ভিত্তি করে ব্রোকেট কাতান, পিরামিড কাতান, মিরপুরি রেশমি কাতান, বেনারসি কসমস, চুনরি কাতান, প্রিন্স কাতান ইত্যাদি নামকরন করা হয়ে থাকে। মূল্য দেড় হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে একেকটি শাড়ির। 

হাবু গ্রামের তাঁতি আকতারুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্য ধরে রাখতেই তিনি এখনও তাঁতের এই ব্যবসাটি ধরে রেখেছেন। তার ৪টি তাঁত রয়েছে। পরিবারের চার জন সদস্য তাঁতে কাজ করছেন। 

বেনারসি পল্লীর প্রথম উদ্যোক্তার আবদুর রহমান বলেন, সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা তারা পাননি।  এছাড়া সুতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। ডাইং মেশিন না থাকায় শাড়ি তৈরি করে তাদের ঢাকায় গিয়ে ডাইং করাতে হয় এতে খরচ ও সময় দুটোই ব্যয় হয়। ফলে বেনারসি পল্লীর অনেকেই ব্যবসা পরিবর্তন করেছেন। তিনি রকমের ৮-১০ তাঁত দিয়ে ব্যবসাটিকে ধরে রেখেছেন। 

বুড়িরহাটের ব্যবসায়ী তাজিদুল ইসলাম বলেন, বেনারসি পল্লী আগের মতো রমরমা না থাকলেও এখানের বেনারসি শাড়ির কয়েকটি বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তারাই কোনো রকমে বেনারসি নামটিকে টিকিয়ে রেখেছেন। 

বেনারসি শাড়ির উৎপত্তি সম্পর্কে জানা গেছে, এই শিল্পের আভির্ভাব ভারতের বেনারস শহরে। মুসলিম তাঁতিরা বংশপরম্পরায় এই শাড়ি তৈরি করে আসছেন। কিন্তু ঠিক কবে থেকে এর সূচনা হয়েছে জানা না গেলেও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারতের বেনারস থেকে কয়েকটি পরিবার বাংলাদেশে চলে এলে এ দেশেও বেনারসি শিল্পের বিকাশ ঘটে। তারা মিরপুর ও পুরান ঢাকায় বসবাস করতে শুরু করেন এবং সেখানেই বেনারসি শাড়ি তৈরি করতে থাকেন। এরপরে দেশের কয়েকটি স্থানে বেনারসি শিল্প ছড়িয়ে পড়ে। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর