ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কুকুর পালন থেকে খামার গড়ে স্বাবলম্বী সোহাগ
রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

নিজ বাড়িতে শখের বশে বিদেশি কুকুর পালন করে ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম পেয়ে আজ সেটি গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক খামারে। এখন ওই বাড়ির নাম হয়েছে ‘ডগ হাউজ’। পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে দিনাজপুর শহরের নয়নপুরে গড়ে তোলা এই খামারে রয়েছে ১৩ প্রজাতির ৭০টি কুকুর। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে এই খামারেই স্বাবলম্বী হয়েছেন দিনাজপুরের জাহিদ ইসলাম সোহাগ। 

বিদেশি বিভিন্ন জাতের কুকুর পালনসহ প্রজনন করিয়ে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। নেশা থেকে পেশায় পরিনত এই খামার। বাণিজ্যিকভাবে কুকুর বিক্রিতে তার প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হয়। এ খামার অনেকের কাছে অনুকরনীয়। 

‘ডগ হাউজের’ গেট খুলে ভিতরে গেলেই দেখা যায় লোহার খাঁচায় বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশী কুকুর। সোহাগ এর সঙ্গে খেলা করছে। ছুঁটছে, লাফিয়ে উপরে উঠছে, হেন্ডশেক করছে। এখন কুকুরের খামার দেখতে ছুটে আসছেন দূর দুরান্তের মানুষ।

প্রায় সাড়ে ৮ বছর আগে শখের বশে জাহিদ ইসলাম সোহাগ প্রথমে আমেরিকান লাসা একটি ও পরে দুটি বিদেশি কুকুর নিয়ে পালন করেন। প্রথমে কুকুরের ৩টি ও পরে ৭টি বাচ্চা প্রজননের মাধ্যমে তার ভাগ্য খুলে যায়। ভালো দাম পাওয়ায় বিক্রি করেন। লাসা কুকুরের দুটি বাচ্চার দাম প্রায় লাখ টাকায় বিক্রি হয়। এরপর অমেরিকান লাসা, জার্মান থেকে জার্মান শেফার্ড ও ইন্ডিয়া থেকে উলফ ডগ ক্রয় করে খামার গড়ে তোলেন। অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কুকুর বিক্রিও শুরু করেন। এখন তার খামারে আমেরিকান লাসা, টয় কোয়ারিয়ান, জাপানি লাসা, চায়না লাসা, জার্মানি শেপার্ড, ব্লাক শেপার্ড, উলফ, এলসেশিয়ান, গোল্ডেন রিটাইভারসহ ১৩ প্রজাতির ৭০টি কুকুর রয়েছে। প্রকার ভেদে এসব কুকুর ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করেন। কুকুর খামারটি দেখাশোনা ও পরিচর্যায় নিয়োজিত রয়েছেন তিনজন শ্রমিক। কুকুরগুলোকে তিন বেলা ডিম, ভাত, সবজি, মাছ, মাংস দিতে হয়। প্রতিদিন তাদের সাবান-স্যাম্পু দিয়ে গোসল করাতে হয়।

কুকুরের খামার করে গর্বিত, সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে এটি বৃহৎ খামার হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান জাহিদ ইসলাম সোহাগ। তিনি জানান, খামারটি নিয়মিত পরিদর্শন ছাড়াও কুকুর লালন পালনে রোগ না ছড়ানোর পরামর্শসহ সবধরনের সহযোগিতা করছেন জেলা ও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা। দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া শেষ করেই ভিডিও এডিটিং ও ফটোশুটের কাজকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করলেও সোহাগ এখন কুকুর পালন করে একজন সফল কুকুর খামারি। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে দিনাজপুর শহরের জাহিদ ইসলাম সোহাগ কবুতরের খামার গড়ে তোলেন। একবার কিছু কবুতর মারা যায়। পরে কবুতরের খামারের পাশাপাশি আমেরিকান প্রজাতির একটি লাসা কুকুর ক্রয় করে পালন শুরু করেন। 

এ ব্যাপারে খামারী জাহিদ ইসলাম সোহাগ বলেন, গত ৮ বছর আগে কবুতরের খামারের পাশাপাশি বিদেশী কুকুরের খামার গড়ে তুলি। অমেরিকান লাসা ও জার্মান শেফার্ড বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। অমেরিকান লাসা কুকুর ৫ থেকে ৭টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। আর জার্মন সেফার্ড ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। কুকর ছানাদের বয়স ৪০ থেকে ৪৫দিন হলেই বিক্রির জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়। কুকুর ছানাগুলোর এত চাহিদা যে আগে থেকেই ক্রেতারা অর্ডার দিয়ে থাকেন। ডিফেন্সের লোকেরা, বিশেষ করে র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকদের কাছে জার্মান শেফার্ড কুকুরগুলোর চাহিদা বেশি থাকে। কারণ এই কুকুরগুলো অনুসন্ধান বা তদন্তমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক ব্যবসায়ী কুকুর পালনে এখন অনেকটা উৎসাহি। কেনার জন্য কুকুর ছানা জন্মের আগেই কেনার প্রস্তাব দিয়ে রাখে এবং অ্যাডভান্স পেমেন্ট করেও থাকেন অনেকে। টয়লেটের জন্য বাড়ীর বাইরে এবং বাড়িতে ব্যবস্থা রয়েছে। কুকুরের বাচ্চাগুলোকে নিজ সন্তানের মতোই লালন-পালন করি।

তিনি বেকারদের উদ্দেশ্যে বলেন, চাকরির পিছনে না ছুটে কুকুর পালন করেও ভালো আয় করতে পারবেন যে কেউ। কারন এর চাহিদা আছে, দামও ভালো পাওয়া যায়। এ থেকে বছরে কমপক্ষে ৩-৪ লাখ আয় করা সম্ভব। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর