ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বাদামের খোসা ছাড়ানোর যন্ত্র বানিয়ে তাক লাগালেন সুরুজ
সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

বিভিন্ন ওয়ার্কশপে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন তরুণ বয়স থেকে। এই সময়ে মাথার মধ্যে ঢুকে পড়ে যন্ত্র আবিস্কারের নেশা। গত তিন বছর আগে বাদামের খোসা ছাড়ানোর মেশিন বানিয়ে ফেলেন পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সুরুজ আলী। বর্তমানে তিনি সারাদেশে এই মেসিন সরবরাহ করছেন।

পঞ্চগড় জেলা বাদাম চাষের জন্য বিখ্যাত। দেশের প্রায় সিংহভাগ বাদামের চাহিদা মেটায় এই জেলার চাষিরা। অর্থকরী এই ফসল ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের কর্মসংস্থান। ক্ষেত থেকে কাঁচা বাদাম তুলে রোদে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা। সেই বাদাম থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে খোসা ছড়িয়ে দেশের নানা প্রান্তে বাদাম পৌঁছে দেন ব্যবসায়ীরা। খোসা ছাড়ানোর এই যন্ত্র কিনতে বা আমদানি করতে লাগতো অনেক টাকা। কিন্তু বর্তমানে পঞ্চগড় জেলাতেই তৈরি হচ্ছে বাদামের খোসা ছাড়ানোর সেই যন্ত্র।

লক্ষির হাট বাজারে সুরুজ আলীর ছোট্ট ওয়ার্কশপের দোকান। সেই দোকানেই প্রতিদিন নতুন নতুন মেশিন বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন লক্ষির হাট তাতি বাজারের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে সুরুজ আলী (৬৩)। বাদামের খোসা ছাড়ানো মেশিন নিজে বানিয়ে বাজারজাত করছেন তিনি। তার এই যন্ত্রের কথা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। সুরুজ আলী জানালেন ওয়ার্কশপে শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সময়েই তার মাথায় আসে যন্ত্রের কথা। তিনি বলেন বিভিন্ন মোটরযান, সিএনজি, পাগলুর, সেলোমেসিনের ওয়ার্কসপে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করতাম। তখন থেকেই নিজে মেসিন বানানোর চিন্তা মাথায় আসে। দেবীগঞ্জের ঘরে ঘরে বাদাম। কিন্তু বাদামের খোসা ছাড়ানো মেসিন আমদানি করতে হতো বিদেশ থেকে। অনেক খরেচ পড়তো। এ বিষয়টি দেখে তখন আমি শুরু করলাম। মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভাঙ্গা জাহাজের জিনিষপত্র সংগ্রহ করে তৈরী করেন এই যন্ত্র। সিমিত লাভ নিয়ে কমদামে এই যন্ত্র সরবরাহ করছেন তিনি। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তার এই যন্ত্রের কথা। এখন  দেশের নানা প্রান্ত থেকে এই যন্ত্র বানানোর অর্ডার পাচ্ছেন তিনি। ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা মূল্যে যন্ত্র বিক্রি করছেন তিনি। একমাত্র নাতিকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন ওয়ার্কশপ। নানার নাম ডাক শুনে তার কাছে কাজ শিখে নিজেও একজন যন্ত্র আবিস্কারক হতে চাচ্ছেন সুরুজ আলীর নাতি। 

স্থানীয়রা বলছেন সুরুজ আলীর ওয়ার্কশপ থেকে সারাদেশে এই যন্ত্র বিক্রি হচ্ছে। লক্ষির হাট এলাকার আবু হোসেন জানান, সুরুজ আলী বাদামের খোসা ছাড়ানোর যন্ত্র আবিস্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বাদাম ব্যবসায়ীসহ চাষিদেরও অনেক উপকার হচ্ছে।

সুরুজ আলী বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্র আবিস্কার করতে চান। তিনি বলেন, এই যন্ত্রের মাধ্যমে বিনা খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। তবে এ ব্যাপারে দরকার সহযোগিতা।

সুরুজ আলীকে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফুল আলম। তিনি বলেন, সুরুজ আলী অনেক ভালো একটি যন্ত্র আবিস্কার করেছেন। আমরা তার পাশে আছি।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর