ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ঈদ সামনে রেখে সোনারগাঁওয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে প্রস্তুত রয়েছে ১০ হাজারেরও অধিক গরু মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় খামারিরা। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খামারিরা সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। গত এক বছরে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ছোট বড় ২০টি খামার। এ বছরও যদি বিদেশি গরু দেশে প্রবেশ করে তাহলে পথে বসতে হবে এমনটাই দাবি খামারিদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সোনারগাঁও পৌর শহরসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ছোট বড় প্রায় শতাধিক খামারে এবার কোরবানির পশু লালন পালন করা হচ্ছে। এ সব পশুদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে পাকচং ঘাস, কুড়া, ভুসি, খৈল, খড় ও ভাতের মাড়। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে এসব পশু লালন পালন করছেন খামারিরা। 

ঈদ বাজারে বড় গরুর তুলনায় মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদাই বেশি। বড় গরুর ক্রেতা কম। মাঝারি ও ছোট গরুর ক্রেতা বেশি। এসব গরুতে কিছুটা লাভবান হওয়া যায়। বিদেশি গরু দেশে না আসলে কিছু টাকা লাভের মুখ দেখতে পাবে গরু বিক্রেতারা। পশু খাদ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি, শ্রমিকদের মজুরি বেশি থাকায় আশংকা রয়েছে সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে। খামারিরা অসাধু উপায়ে যাতে গরু মোটাতাজাকরণ করতে না পারে সে দিকে নজরদারিসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। খাবারের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামীতে কোরবানির পশু লালন পালন অনেকটাই কমে যাবে, এতে করে লোকসানে পড়বে খামারিরা। 

উপজেলার সাপদী গ্রামের খামারি বশির মিয়া জানান, ২০২০ সাল থেকে খামারে গরু পালন শুরু করি। শুরুতে ১০টি ষাঁড় লালন-পালন দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এবার শাহীওয়াল, সিন্ধি ও দেশী প্রায় ২০টি গরু কোরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছি। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু পালন করছি। বিদেশি গরু দেশে না আসলে কিছু টাকা লাভের মুখ দেখতে পাবো।

কাঁচপুর এলাকার খামারি বাবু ওমর বলেন, প্রায় ৪০টি গরু ছিল খামারে। ইতিমধ্যে ৭০% গরু বিক্রি করে দিয়েছি। খাদ্যের যে দাম যদি হাটে সঠিক দাম না পাই সেই শঙ্কায় অল্প লাভেই সব গরু বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বড় গরুগুলোর ক্রেতা কম। মাঝারি ও ছোট গরুতে লাভবান হওয়া যায়। চাহিদাও বেশি। 

মঙ্গলেরগাঁও চরপাড়া এলাকার সালাম খলিফা জানান, কোরবানির জন্য সিন্ধি, ফ্রিজিয়ান ক্রস, নিলি রাভী ও দেশী ষাঁড়সহ ১১ গরু এবং ২২টি মহিষ লালন-পালন করেছি। খাবার দাম বেশি তাই বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়ার আগেই শঙ্কা কাটাতে পারছি না। ন্যায্যমূল্য না পেলে পথে বসতে হবে। করোনার পর থেকে গরু বিক্রি করে লাভবান হতে পারছি না। লাইভ ওয়েট সর্বোচ্চ ৮০০ কেজি ওজনে গরু রয়েছে। ইতোমধ্যে গরুর ছবি ও ভিডিওসহ অনলাইনে বিক্রয়ের চাহিদা দিয়েছি। সেখানে এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাই নাই।

খামারি জামাল মিয়া, ফজলু মিয়া, অতুল মিয়া, আক্তার মিয়া জানান, খাবারের দাম বাড়ার কারণে গরুর ন্যায্য দাম পাবে কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। করোনার পর গত বছরেও লোকসান হয়েছে। এবার লোকসান পুষিয়ে নিতে আবারো গরু লালন-পালন করছেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের ব্যয় যে হারে বেড়েছে তাতে করে আয় না বাড়ায় শঙ্কায় রয়েছে তারা।   সোনারগাঁ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনজুরুল হাসান জানান, এবার কোরবানি উপলক্ষে সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। একাধিক টিম সোনারগাঁও উপজেলার খামারিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। অসাধু উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ যাতে করতে না পারে সে দিকে নজরদারি করা হচ্ছে। সেই সাথে প্রাণিসম্পদ অফিস কর্মকর্তারা প্রতিটি খামারে গিয়ে খামারিদের পরামর্শ দিয়ে আসছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের সুবিধার্থে খামারিদের গরুর ছবি, নাম ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে ভৈরব অনলাইন কোরবানি ডিজিটাল হাট নামে ফেসবুক পেইজে গরু বেচা কেনার ব্যবস্থা করেছি। ক্রেতা বিক্রেতা এখানে চাহিদা মত কোরবানির পশু কেনা বেচা করতে পারবেন। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর