ঢাকা, বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম
ডা. শাহজাদা সেলিম

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস এখন আর কোনো বিরল রোগ নয়। প্রতি ১০ মেয়ের মধ্যে একজনের (৬-১৪%) এ সমস্যা থাকে। পিসিওএস একটি হরমোনজনিত সমস্যা। পিসিওএস জিনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত ত্রুটির সমন্বিত ফল। এটি প্রতিরোধযোগ্য, নিরাময়যোগ্য। বহু মেয়ে এ সমস্যায় ভুগলেও এ রোগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই। অনলাইনে খুঁজলেই নানা তথ্য পাওয়া যায় এ রোগ নিয়ে। অথচ নেটমাধ্যমে ঘুরছে প্রচুর ভুল ধারণাও; সেগুলো এখানে খন্ডাতে চেষ্টা করছি।

ডিম্বাশয়ে সিস্ট থাকলেই পিসিওএস!

পিসিওএস-এ আক্রান্ত বেশিরভাগ মহিলার উচ্চ মাপের আন্ড্রোজেন অথবা পুরুষ হরমোনগুলোর উপস্থিতি থাকে। মেয়েদের দেহে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে এর প্রভাবে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। ফলে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বড় হয়ে বের হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হয় এবং এভাবে একসময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে নিয়মিত ঋতুচক্র বাধাগ্রস্ত হয়। সিস্ট দেখা না গেলেও আপনার এ রোগের নানা উপসর্গ থাকতেই পারে। আবার ডিম্বাশয়ে কোনো সিস্ট থাকা মানেই সেটা পিসিওএস রোগের লক্ষণ নয়। আরও নানা কারণে সিস্ট হতে পারে।

শরীরে অবাঞ্ছিত লোম থাকবে যেহেতু পিসিওএস থাকলে মেয়েদের শরীরে ছেলেদের হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের ক্ষরণ বেশি হয়, তাই অনেক মেয়েদের ঠোঁটের ওপরে, পেটের চারপাশে, থুতনি বা বুকে অত্যধিক লোম থাকতে পারে। তবে সব মেয়ের একই লক্ষণ থাকে না। এমন বহু মেয়ে রয়েছেন যাদের পিসিওএস থাকা সত্ত্বেও শরীরের লোম স্বাভাবিক। জীবনযাপনভিত্তিক ব্যবস্থাপনা (লাইফ স্টাইল ম্যানেজমেন্ট) পিসিওএস চিকিৎসার কেন্দ্রে অবস্থান করছে।  এর জন্য দ্রুত একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হতে হবে। অনেক সময় কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার দরকার হয়। যেহেতু এ রোগের মূল সমস্যা ডিম্বাণু উৎপাদন না হওয়া, অনেক মেয়েকে প্রথমেই ভয় দেখিয়ে দেওয়া হয় যে মা হওয়া যাবে না। কিন্তু পরিস্থিতি একেবারেই তেমন নয়। পিসিওএস থাকা সত্ত্বেও বহু মেয়ে স্বাভাবিক নিয়মেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকেন। তা ছাড়াও নানারকম ফার্টিলিটি চিকিৎসার সুবিধা এখন রয়েছে। ফলিকল স্টিমিউলেটিং ওষুধের সাহায্যেও অনেকে মা হতে পারেন।

অনিয়মিত ঋতুস্রাব মানেই  কি পিসিওএস আরেকটি মারত্মক ভুল ধারণ মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়ে। প্রথমেই বলে রাখা ভালো মানসিক চাপ, জরায়ুতে ফাইব্রয়েড, পেলভিকে কোনোরকম প্রদাহ, থাইরয়েডের সমস্যা, খুব বেশি পরিমাণে ডায়েটিং বা এক্সারসাইজ, হরমোনের গোলমাল- অনেক কারণেই মেয়েদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে। শুধু পিসিওএস নয়। আবার এ রোগ থাকলে অনেকে মেয়ের যেমন খুব অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়, অনেকের ততটা সমস্যা না-ও হতে পারে।

পিসিওএস থাকলেই কি মেয়েরা মোটা হবে এ ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল। এটা সত্যিই যে বেশির ভাগ মেয়ের ক্ষেত্রে এ রোগ থাকলে ইনসুলিন রেজিসট্রেন্স এত বেশি থাকে যে ওজন ঝরানো মুশকিল হয়ে পড়ে। খুব তাড়াতাড়ি তাদের ওজন বেড়েও যায়। পিসিওএস থাকলে মেয়েদের মধ্যে স্থূলতা দেখা যায় ঠিকই কিন্তু অন্যদিকটাও সত্যি যে এমন অনেক মেয়ে রয়েছেন, যাদের এ রোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মনে রাখতে হবে এ রোগের উপসর্গ অনেক এবং প্রত্যেক মেয়ের ক্ষেত্রেই এগুলো আলাদা হতে পারে। তাই জীবনধারায় কী ধরনের বদল আনলে উপকৃত হবেন, তা চিকিৎসকই বলতে পারবেন। পিসিওএস একটি হরমোনজনিত সমস্যা। এটি প্রতিরোধযোগ্য, নিরাময়যোগ্য। জীবনযাপনভিত্তিক ব্যবস্থাপনা (লাইফ স্টাইল ম্যানেজমেন্ট) পিসিওএস চিকিৎসায় সবচেয়ে ফলদায়ী পদ্ধতি। এর জন্য সময়মতো একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।



এই পাতার আরো খবর